লোহা গরম হ্যায় -রেস্টোর ডেমোক্র্যাসিযক্ষ যদি ধর্মপুত্রকে আজকের দিনে ক্যুইজ করত-১) কংগ্রেস কী চায়?২) সিপিএম কী চায়?৩) তৃণমূল কী চায়?তার উত্তরগুলো সম্ভবতঃ যথাক্রমে এই রকম হত-১) যে কোন প্রকারে কেন্দ্রের গদি টিকিয়ে রাখতে।২) যে কোন প্রকারে পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যের গদি টিকিয়ে রাখতে।৩) যে কোন প্রকারে সিপিএমকে পশ্চিমবঙ্গের গদি থেকে হঠাতে।কংগ্রেস এমন একটা দল যে কেন্দ্রের মধু খেতে চিরকাল রাজ্যে চদু সেজে রইল। 'সেজে রইল' বলার বিশেষ কারন আছে। সাংবাদিক সম্মেলনে মানস ভুঁইঞা বললেন, রাজারহাটে জমি কেলেঙ্কারির তদন্ত বুদ্ধবাবু করুন। এক পরিচিত ভদ্রলোক কারনে অকারনে বলতেন, 'লাউ মানে কদু, যে না জানে সে চদু'। কে না জানে হাফ বয়েল গৌতম সিদ্ধ হয়ে বুদ্ধ হয়েছিলেন। এবং আরও জানে,"জাহাজ-ক্যাপ্টেন তুমি ,বাকি সব মাঝি আর মাল্লাসকলে জাঙ্গিয়া পরা, তুমি শুধু পরে আলখাল্লা"।মানসও বিলক্ষণ জানেন। তবু বললেন, কারন রাজ্য কংগ্রেসের চদু সেজে থাকাই কেন্দ্রীয় সরকারের লাইফ ইনসিওরেন্স। স্টেপনিও বলা যেতে পারে। মমতা কাল যদি হঠাৎ সিংজীর টায়ারের হাওয়া খুলে নেন স্টেপনি হয়ে নিজেকে তৎক্ষণাৎ গুঁজে দেবে সিপিএম। তাইতো নীলোৎপল টুজি-র পরেও গদগদ মুখে সিংজীর মূলধনের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেন না। চ্যানেলের পোষা সাংবাদিকটিও মনে করিয়ে দিতে ভোলেন না, সবই আসলে অভিযোগ মাত্র। জমি অধিগ্রহন প্রশ্নে শরিক নেতা কংগ্রেসের ম্যাচিওরিটি দেখতে পান। অবশ্য তর্কাচার্য্য মশাইদের পুঁথির বাইরের বাস্তব রাজনীতিতে সিপিএমের কংগ্রেসের মধ্যে মনের মানুষ খুঁজে পাওয়াটাই স্বাভাবিক।দেথবেন, আচমকা পিছনে আলপিন ফুটলে লোকে 'বাবাগো' বলে চেঁচিয়ে ওঠে। বিপদে পরম নিকটাত্মীয়কে স্মরণ করবে বৈকি। মঙ্গলকোটে সিপিএমের কাছে হুড়কো খেয়ে তাই মানসপুত্র পরমপিতার কাছে 'বাঁচান স্যার' বলে কান্নাকাটি করলেন। উনি বিলক্ষণ জানতেন, তখনও যেহেতু পশ্চিমবাংলায় ঠিকঠাক বসন্তের আগমন ঘটেনি, তাই মরে গেলেও দিল্লী থেকে কোন কোকিলই বাঁচাতে আসবে না। ছানাকে কাকের বাসায় দিয়ে কোকিল দিল্লীর গুলবাগিচায় মশগুল হয়ে আছে। কাকের নিজরে ছানাপোনা যদি কোকিল ছানাকে খুঁচিয়ে মারে তাহলেও সে থোড়াই কেয়ার করে!আজ বাংলায় বিরোধী রাজনীতির বসন্ত এসেছে। কুসুমাস্তীর্ণ নীপবনে তাই কুহু ডেকে যায় কোকিল। কিন্তু ছানা এখনও পুরনো কৃতজ্ঞতা ভোলে কী করে? তাই মানসবাবুর 'স্টাডি' করার সময় চোখে ধরা পড়েনাঅধিগ্রহনের সময় জমির দাম কৃত্রিম ভাবে কম রাখার জন্য রাজারহাটে তিন বছর কোন রকম জমি কেনাবেচা বন্ধ রাখার কথা। ভুলে যান জনৈক ইট-ভাটা মালিককে গুন্ডা দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে জমি লিখিয়ে নেওয়া এবং তার পর তার নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার কাহিনী। কৃতজ্ঞতার ফিল্টারে গৌতমীর ঘোলা জল ওঁর কাছে স্বচ্ছতোয়া হয়ে যায়। কাদা গোলা পড়ে থাকে প্রদেশ কংগ্রেসের গায়ে।এই নোংরা যেমন অসংখ্য প্রকৃত সিপিএম বিরোধী কংগ্রেস কর্মীকে গিলতে হয়। গিলতে হয় তৃণমূলকেও। দায়, পশ্চিম বাংলার বুক থেকে সিপিএম নামক বিষকৃক্ষের উৎখাতের। হয়তো সেই দায়ের জেরেই যে মমতা কফিন কেলেঙ্কারির জেরে মন্ত্রক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন, টুজি স্ক্যামের পর তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকতে হয়। জঙ্গলমহলে যৌথবাহিনীর আড়ালে হার্মাদ তান্ডবের প্রতিকার না পেয়েও আল্টিমেটাম দেওয়াযায় না। বাংলা জুড়ে হত্যালীলার প্রতি কেন্দ্রের উদাসীনতা, অসংখ্য কর্মীর মৃত্যু দাঁত চেপে সহ্য করতে হয়। কারণ, তৃণমূল জানে শকুন ভাগাড়ের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে।তাই, কাকের যেসব মানসপুত্র/কন্যারা মাঝেমধ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফেলছেন তাঁদের চিনে নেওয়ার ও বিচারের ভার রাজ্যের সিপিএম বিরোধী সাধারন মানুষের। জনগন জানেন, এখন লোহা গরম।
Saturday, November 20, 2010
লোহা গরম হ্যায় - রেস্টোর ডেমোক্র্যাসি
Wednesday, September 8, 2010
নতূন সুর্য্যদ্বয়ের উপাখ্যানঃ জঙ্গলমহল - সায়ন ঘোষ
না নতূন করে নন্দীগ্রামের সুর্য্যদ্বয়ের কথা বলতে চাই না। সেই হাড় হিম করা আতঙ্ক যা রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাষকের সাথে সাধারন মানুষকেও বিচলিত করে তুলেছিল আর রক্তস্নাত নন্দীগ্রামের মাটিতে সূর্য্যদ্বয় ঘটেছল সেই করূন সত্য না হয় থাক। কিন্তু নতূন সুর্য্যদ্বয়ের পালা চলছে তার কথা জানতে হবে আর সেটাই জানব কারন না জানলে তো হিষাব পাব না যে গত ৩৪ বছরের অন্ধকার আর মাৎসন্যায়ের সুযোগ নিয়ে লাল বাংলার সোনার মাটি নতূন করে আর কতজন বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থক, নিরপরাধ মানুষের রক্তে লাল হয়েছে। তাই জানতে হবে আর মুখোশ গুলো ছিঁড়ে ফেলার কাজটা আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ছোটবেলায় লেখা একটা কবিতার লাইন মনে পড়ল
‘হিষাবের খাতায় আজ বেহিষেব
পজিটিভ প্রফিটের নেগেটিভ ফেস’
সখ করে নাম দিয়েছিলাম ‘প্রলাপ’। জানি না তখন কি ভেবে লিখেছিলুম কারন আজকে ভাবি যদি সত্যি এই রাজ্যের মানুষগুলো প্রলাপ বকত তাহলে এপি সিরিসে সিপিএমের সুর্য্যদ্বয় গুলো হয়ত দেখার চোখ থাকত না। সাদাকালো বাস্তবে রঙ্গীন রংচশমা পড়েমানুষগুলো বেশ থাকত কারন সবাই সত্যিটা জানত- সেটা হল
‘নেগেটিভের ছায়া
বদলে দিল কায়া
দেখতে গেলাম তাকে
গিয়ে দেখলাম মায়া’
যাইহোক, পাবলিক বোর হচ্ছেন হবে হয়ত। ভাবছেন তখন থেকে নান্দনিক আঁতলামো করে দার্শনিকতা ফলাচ্ছি ওদিকে গনতন্ত্র বাচাতে গিয়ে বিরোধী দলের ৩০০০ কর্মী সমর্থকরা শহীদ হয়ে যে আত্মবলিদান দিয়েছেন, প্রায় এককোটি মানুষ যে দীর্ঘ ৩৪ বছরে রাজনৈতিক ‘লাল’ সন্ত্রাসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেটা সম্পুর্নরূপে হয়ত ভুলে গেছি। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি আপনাদেরকে, গনতন্ত্রের হত্যা কিভাবে হয় তার প্রমান লাগে? মনে হয় না। বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচারী সেনানায়করা এবং কমিউনিস্ট পার্টিগুলো তার প্রমান দিয়েছে, এমনকি সংসদীয় গনতন্ত্রের চৌহদ্দিতে থেকেও ক্ষমতাসীন দলগুলি এমন অনেক কাজ করেছেন যা হত্যারই সমর্থক। কিন্তু আদর্শবাদেরর ব্যাখ্যা পালটে ‘শুয়োরের খোঁয়ারকে’ কে মান্যতা দিয়ে গনতন্ত্রকে নৃশংসভাবে গলা টিপে কিভাবে কিভাবে হত্যা করতে হয় তার জলজ্যান্ত উদাহারন পেতে চাইলে সিপিএম পার্টিকে দেখুন বিশেষ করে ২০০৬ পরবর্তী ‘ওরা ৩০, আমরা আমরা ২৩৫’ সিপিএম পার্টিকে। আগেই বলেছি নন্দীগ্রামের সুর্য্যদ্বয়ের কথা বলব না, বরং বলতে চাই নন্দীগ্রামের থেকেও বড় এক ভয়ঙ্কত কঠিন সত্য। এই সত্যে সুর্য্যদ্বয়ের অংশটি ক্ষুদ্র বটে কিন্তু বাস্তব জীবনের ইতিহাসটি বড়ই করুন।
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৮ সালের জানুয়ারী মাসে।প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের দেউলিয়া দালালীপনায় বিতসৃদ্ধ হয়ে সাধারন মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বাংলার জননেত্রী, বাংলার জোয়ান অফ আর্ক মমতা ব্যানার্জী, তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে তোলেন তার অনুগামীদের নিয়ে। এবং প্রথম বারেই বাংলার বিভিন্ন লালদূর্গের সাথে পশ্চিম মেদিনীপুরের (তখন অবিভক্ত মেদিনীপুর) লালদূর্গ কেশপুরেও তৌফিক (পরে পার্টি বিরোধী কাজের ফলে অপসৃত), পিংলার শঙ্কর ভুইয়ার সুযোগ্য নেতৃত্বে জুলাই-অগাস্ট মাসের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিস্ঠতায় টিএমসি কে ক্ষমতায় আনে। ঘৃন্য শাষকের হ্যামলীনের বাশির আওয়াজটাকে কার্যত থামিয়ে দেয় আর এখানেই গরীবদরদী মুখোশটা ছিড়ে বেরিয়ে আসে সিপিএমের ক্ষমতালোভী চরিত্রটা। একাধিপত্যে আঘাত ঘটায় মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের দুই সুযোগ্য শিষ্য তপন-শুকুর ( তপন ঘোষ এবং শুকুর আলি)আর সিপিএমের ভাড়া করা গুন্ডাবাহিনী যারা ‘ভৈরববাহিনী’ নামেই বেশী খ্যাত প্রতিশোধ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধারন মানুষের উপর, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, গ্রামের মা-বোনেদের সম্মানহানী করা হয় কেবল বিরোধী দলকে জেতানোর অপরাধে। ঘটনার ভয়বহতা বোঝানোর জন্য একটি উদাহারনই বা নামই যথেস্ট – ছোট আঙ্গারিয়া। কিন্তু আপনাদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে এর ফলে এর সাথে নতূন সুর্য্যদ্বয়ের কি সম্পর্ক? আপাত দৃস্টিতে নেই বলে মনে হলেও আছে কারন এই ঘটনাই পরোক্ষভাবে পশ্চিম মেদেনীপুরের জঙ্গলমহল সহ এক বিস্তীর্ন এলাকার মাটিতে সি.পি.আই-পি.ডাব্লু.জি {পরবর্তী কালে এম.সি.সির সঙ্গে মিশে এরাই সি.পি.আই–মাওবাদী তৈরী করে।} কে ডেকে আনে। সেই শুরু যে অঞ্চলে মাওবাদীদের কোন অস্তিত্বই ছিল না, সেখানে ভৈরববাহিনীর তান্ডবের সুযোগে তারা যেমন মানুষের ক্ষোভের সুযোগ নিতে এগিয়ে আসে তেমন ওই অঞ্চলের হতভাগ্য মানুষগুলোর গনতন্ত্রের প্রতি যে নূন্যতম ক্ষীন বিশ্বাষটুকু ছিল সেটাও সম্পূর্ন বিলীন হয়। ফলে গোটা এলাকায় সিপিএমের সন্ত্রাসের ফলে তাদের একাধিপত্য বজায় থাকলেও বাংলার মাটিতে মাও বিচ্ছিন্নতাবাদের এক নতূন অধ্যায় শুরু হয় যার সম্পুর্ন বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাব ঠিক ১০ বছর বাদে।
নভেম্বর ২,২০০৮ এ ঠিক কি ঘটেছিল সেটা জানার আগে বোধহয় এটা জেনে নেওয়া ভাল কেন ঘটেছিল। যদি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিচার করতে হয় তাহলে বন এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য্যে ভরা ভারতের ছোটনাগপুর অঞ্চলের মানুষ ভূমিপুত্র আদিবাসীদের বঞ্চনার ইতিহাসটা নতূন করা না জানার থাকলেও বলতে বাধা নেই স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতবর্ষেও এনারাই রয়ে গিয়েছেন সবচেয়ে বঞ্চিত, শোষিত; প্রকৃত উন্নয়ন অর্থে কিছুই হয়নি বরঞ্চ অন্যদের উন্নয়নের জন্য এদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে খাদের কিনারে। প্রাসঙ্গিকতার পরিপ্রেক্ষিতে বলে রাখা ভাল যে আমি কেবল কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলের পরিথিতি নিয়েই লিখব। প্রাকৃতিক খেয়ালখুশীতে এমনিতেই জঙ্গলমহলে বছরে মাত্র একবার বর্ষাকালীন চাষ হয়। জঙ্গলমহলে ক্ষুদ্র চাষীর সংখ্যা নেহাতই কম ( বৃহৎ বা মাঝারী চাষী খুজে পাওয়া ভার, গানিতিক পরিভাষায় বললে টেন্ডস টু জিরো)। এখানকার অধিকাংশ মানুষই ভূমিহীন ক্ষেতমজুর যাদের অধিকাংশের প্রধান জীবিকা শষ্যশ্যামলা বঙ্গদেশে জনমজুর বা ইটভাটা বা পাথর খাদানে শ্রমিক হিসাবে খাটতে যাওয়া, আর মহিলারা অধিকাংশই জঙ্গলে কেন্দুপাতা তুলে জীবিকা নির্বাহ করে, জঙ্গলমহলে আধিকাংশ জমি খাস জমি অথবা জঙ্গল এবং অনুর্বর হওয়াতে যেমন ভূমিসংস্কারের কাজ একেবারেই হয়নি তেমনি বড় বড় জোতদাররা সিপিএমের নেতা,হাফ নেতায় পরিনত হওয়ায় তেদের জমিও নেওয়া হয়নি। উলটে দূর্নীতিগ্রস্ত পঞ্চায়েত গুলি স্বজন পোষনের মাধ্যমে ফুলে ফেপে উঠলেও তাতে আদিবাসীদের কাজের কাজ বা উপকার কিছু হয়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জলের মত নূন্যতম সংবিধান স্ব্রীকৃত সামাজিক ও মানবিক মৌলিক চাহিদাগুলি পূরন করার কোন চেস্টাই করা হয়নি। বিষেশত জঙ্গলমহলে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের টাকা দিনের পর দিন হয় কাজ না করার জন্যা ফেরৎ গেছে নয়ত সেই টাকায় হতদরিদ্র গ্রামগুলোর মাঝে পার্টি অফিস, নেতাদের বাড়ির নামে একাধিক দালান কোঠা গড়ে উঠেছে। প্রতি উত্তরে অর্ধাহার অনাহারে দিন কাটানো মানুষগুলোকে ছেলে ভুলানোর মত পিয়ং-ইয়ং স্টাইলে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার গল্প না হয় তত্ব সর্বস্য জার্মান/রাশিয়ান সর্বহারাদের বাণী শোনানো হয়েছে। জঙ্গলের ভূমিপুত্রদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে, সামান্য শুকনো কাঠ বা বনের ফলমূল কুড়ানোর ফলে তাদের হেনস্থা করা হয়েছে দিনের পর দিন, আদিবাসী নারীদের যৌন লাঞ্ছনা করা হয়েছে এমনি তাদের জেলেও পোড়া হয়েছে কাঠ পাচারের দায়ে।পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর বা ভয়াবহ ছিল তার উদাহারন দেবার জন্য একটি নামই আমাদের গা শিউরে ওঠার জন্য যথেস্ট – আমলাশোল। দূর্ভাগ্যের কথা মিডিয়ার মাধ্যামে আমলাশোল বা খয়রাশোলের কথা আমাদের কানে এলেও জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্তে আরো কতগুলো আমলাশোল আছে আমরা জানি না। আবার গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো জঙ্গলমহলে এই বিপুল পরিমান মানুষের ভিতর যে ক্ষোভ আছে সেটাকে কাজে লাগানোর জন্য বিহার,ওরিষ্যা থেকে মাওবাদীদের আনাগোনা শুরু হলে শুরু হয় গ্রামে গ্রামে পুলিশের আনাগোনা এবং অত্যাচার, শুধু তাই নয় জঙ্গলমহলে খুব অল্প পরিসরে যে কটি প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র বা চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে ঊঠেছিল মাওবাদী দমন করতে আসার নামে পুলিশি ঘাঁটিতে পরিনত হয়, কিন্তু এত কিছু সত্তেও একটা ব্যাপার উল্লেখযোগ্য ছিল যে জঙ্গলমহলের প্রতিটা প্রান্তে যে মাওবাদীদের প্রাধান্য ছিল না বললেই চলে হঠাৎ কি এমন ঘটল যে জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ন প্রান্ত মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চলে তথা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিন্ত হল?
এবার আসি ২ রা নভেম্বর,২০০৮ এর ঘটনায়। শালবনীতে জিন্দাল স্টীল প্লান্টের দ্বারোদঘাটনে সেরে ফেয়ার সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান এবং জিতিন প্রসাদের উপর হামলা হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বেঁচে গেলেও জানা যায় আসল উদ্দেশ্য ছিল হত্যাবাবুকে হত্যার, কিন্তু ঘটনার পরের ঘটনাগুলি আর আশ্চর্য্যজনক, কনভয়ে হামাওলার জন্য একদিকে যেমন গ্রামে গ্রামে পুলিশি অত্যাচার বেড়ে যায় অপরদিকে সিপিএমের ক্যাডার বাহিনীও ছোট আকারে হামলা চালাতে থাকে। পরিস্থিতি চরমে ওঠে যখন পুলিশ হামলার ঘটনায় জ্বরিত থাকার অভিযোগে ১৬-১৮ বছর বয়েসী তিন নাবালক স্কুল ছাত্রকে গ্রেফতার করে, যার প্রতিবাদে গনপ্রতিরোধ গড়ে ওঠে, বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা জঙ্গলমহল, অত্যাচারের ফলে খাদের কিনারে পৌছে যাওয়া, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া আদিবাসীরা একটি জনসংগঠন হড়ে তোলেন নাম হয় পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারনের কমিটি বা পি.সি.পি.এ। তারা যে প্রাথমিক ১১ দফা দাবী পেশ করে সেগুলি হল
1) The SP has to hold his ears and ask for forgiveness. He has to say ‘Form now onwards I will stop illegally arresting the people and especially women.’
2) The police who were involved in the 5/11/2008 incident where women were beaten up have to rub their noses on the ground as punishment, from Dalailpur Chawk to Choto Pelia.
3) The women of Choto Pelia who were injured by the police torture have to be compensated with 2 lakh rupees each.
4) All suspects arrested or detained in relation to the Shalboni incident have to be released unconditionally.
5) All people arrested or accused in suspicion of being Maoist in West Midnapore since 1998 have to be cleared of all charges and should not be compelled to attend court sessions or police station enquiries regularly.
6) Arresting locals from anywhere, anytime without warrant have to be ended.
6) Arresting locals from anywhere, anytime without warrant have to be ended.
7) All paramilitary camps like those in Dharampur, Kalaimudi, Ramgarhhave to be removed immediately.
8) That Sasadhar Mahato planned the Shalboni explosion sitting in Bashber village - this allegation has to be withdrawn.
9) The practice of harassing clubs and organizations of independent people all over Bengal must be put to an end.
10) Police patrolling in villages from 5 in the evening to 6 in the dawn have to be stopped.
11) Schools, hospitals, panchayet offices cannot be used as police camps, the existing ones have to be removed.
8) That Sasadhar Mahato planned the Shalboni explosion sitting in Bashber village - this allegation has to be withdrawn.
9) The practice of harassing clubs and organizations of independent people all over Bengal must be put to an end.
10) Police patrolling in villages from 5 in the evening to 6 in the dawn have to be stopped.
11) Schools, hospitals, panchayet offices cannot be used as police camps, the existing ones have to be removed.
অর্থাৎ ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে একটি দাবীও বেআইনি, অনায্য বা সংবিধানবিরোধী ছিল না, হ্যা বেশ কয়েকটি দাবী অবাস্তব ছিল বটে কিন্তু আলোচনায় মিটিয়ে নেবার পরিবর্তে জনগনের কমিটির সাথে বারেবারে মাওবাদীদের নাম মিশিয়ে (যদিও ঘটনার পরবর্তীকালে তাই হয়েছিল) তাদের উপর শুরু হয়ে যায় পুলিশ আর সিপিএমের ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচার। কিন্তু হলফ করে বলা যায় আন্দোলনের শুরুর দিকে মাওবাদীদের সাথে জনগনের কমিটির কোন যোগ ছিল না। অবশ্য এই লেখায় আমি পরবর্তীকালে জনগনের কমিটির দূর্নীতি, জোড়জুলুম, মাওবাদীদের দিকনির্দেশে আন্দোলন পদচালনা, কমিটি/মাওবাদীদের আর পুলিশের মাঝে অসহায় আদিবাসীদের করুন অবস্থা এই দিক গুলো আলোচনা করব না কারন প্রাসঙ্গিক হলেও এটা আলাদা প্রসঙ্গ। কিন্তু উল্লেখযোগ্য দিক এটাই যে এক সম্পূর্ন গনআন্দোলনকে মাওবাদীদের হাতে উপহার হিষাবে তুলে দেওয়ার পিছনে কিন্তু মুখে গনআন্দোলনের ধ্বজাধারী সিপিএমই। যখন দেখা গেল লালগরের গন-আন্দোলন সম্পূর্ন রূপে সিপিএম পরিচালিত বামফ্রন্ট সকারের বিরুদ্ধে তখন পুলিশ ছাড়াও সুশান্ত ঘোষ, দীপক সরকাদের ভৈরব বাহিনী লাফিয়ে পড়ল নিরীহ আদিবাসীদের উচিত শিক্ষা দিতে কিন্তু ভুলে গেল বিপক্ষে নিরীহ নিরস্ত্র টিএমসি কর্মী বা বিরোধীরা নন আছে অবস্থা/ক্ষোভের সম্পূর্ন সুযোগ নেওয়া তাদেরই জ্ঞাতভাই মাওবাদীরা। বুলেটের জবার এল বুলেটে, হুমকির জবার এল হত্যায়, এক ঠ্যাঙ্গারে বাহিনী কে হাঠিয়ে এলাকার দখল নিল আরেক ঠ্যাঙ্গারে বাহিনী। কিন্তু তফাৎটা হল কেবল এবং কেবল্মাত্র সিপিএমের কারনেই লালগড়ের সঙ্গে গতা জঙ্গলমহলে সাধারন মানুষের সমর্থন পেল মাওবাদীরা। আমি এই প্রসঙ্গে মাওবাদীদের সম্পুর্ন দোষী হিষাবে মানতে নারাজ, কারন প্রশ্ন হল আমি কাকে বেশী দোষী মানব যে আমাকে সমাজবিরোধী দলে জায়গা দিল, না যে আমাকে সমাজবিরোধী হতে বাধ্য করল?
নন্দীগ্রামের সুর্য্যদ্বয় কান্ড থেকে শিক্ষা নেওয়া সিপিএম যৌথবাহিনীর সাথে এলাকা দখলের যে নকশা প্রস্তুত করে তা সম্পূর্ন ব্যার্থ হয় পরবর্তীকালে। প্রশিক্ষিত পুলিশবাহিনী পেশাদারী দক্ষতায় এলাকার দখল নিতে পারলেও আইনের শষন পুনঃপ্রস্তিস্ঠা করতে অপারগ হয়। উওটে এই সময়ে প্রতিশোধ স্পৃহায় বেশ কিছু নিরীহ নির্ভীক হতদরিদ্র সিপিএম কর্মী যেমন মারা যান তেমন বিছিন্নতাবাদী মাওবাদীদের হামলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বেশ কিছু ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দারদের অকাল মৃত্যু ঘটে। প্রসঙ্গত বলা ভাল এই সময় অত্থাৎ যৌথবাহিনী লালগড় দখল করার পরে আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা নেন যার মধ্যে অন্যতম ৭ জন সচিব পদের আমলাকে নিয়ে একটি বিশেষ টিম তৈরী হয় যারা কয়েকবার জনগনের পয়সা নস্ট করে বার কয়েক হেলিকপ্টারে লালগড়ে ভ্রমন যাওয়া ছাড়া কাজের কাজ কিছুই করেন নি।
আপনারা ভাবছেন তাহলে লালগড়ের সুর্য্যদ্বয়টা কখন হল, আসলে এই সুর্য্যদ্বয়ের অত্যন্ত ধীর শম্বুকগতি সম্পন্ন এক ঠান্ডা মাথার এক খুনে এলাকা দখলের পরিকল্পনা। সিপিএম জানত বিপক্ষে আছে মাওবাদীরা, তারা যথেস্ট প্রশিক্ষিত এবং সশস্ত্র, এলাকার ব্যাপ্তি বিশাল তাই কেশপুরের মতো লাঠি হাতে বা নন্দীগ্রামের মত গ্রামের মা বোনেদের বঁটি-কাটারী হাতে প্রতিরোধের সম্মুক্ষীন কখনই হতে হবে না তাই অল্প হার্মাদে কাজ হবে না, চাই যথেস্ঠ লোকবল, এবং সময় এবং সর্বোপরি চাই অর্থ। যেহেতু ২০০৯ সালের লোকসভা, এবং তার পরবর্তী বিধানসভা উপনির্বাচনে এমনকি ২০১০ সালের পুরনির্বাচনে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল ঘতে গেছে তাই সরকারী স্তরে ব্যাপক কুরচুরি করা প্রায় অসম্ভব তাই এই কাজে প্রথম টাকা তোমার শুরু হয় বিদেশে বসবাসকারী বামমনোভাবাপন্ন ভারতীয়দের থেকে আর ভিন রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে কর্মরত হাজার হাজার বামমনোভাবাপন্ন তরুনদেরর থেকে, সিটুর শ্রমিকদের ফান্ড কারচুপি করে যার সমস্তটাই ব্যয় হয় অশ্ত্র কিনতে। পরবর্তীকালে টাকার যগান আসে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অতিরিক্ত বরাদ্দ বাজেট থেকে,সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলির NRGEA ফান্ড কারচুপি করে। এছাড়াও সাহায্য আসে সিপিএমের পালিত বিভিন্ন জোতদারদের থেকে। ভৈরববাহিনীর হার্মাদদের জন্য খাদ্য আসে ওই একইভাবে অর্নপূর্না এবং অন্ত্যদয় প্রকল্পের মাধ্যমে, এই কাজে সক্রিয় ভূমিকা নেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন এবং বিনয় কোঙ্গার এবং অনিল বসু। অবশ্যই সুশান্ত ঘোষ আর দীপক সরকারের নাম নতূন করে লিখলাম না। প্রথম পর্বে ১০০ জন হার্মাদ এনায়েতপুরের পার্টি অফিসকে বেস করে একের পর এক গ্রামে আঘাত হানতে থাকে, কমিটির সমর্থকদের খুন করতে থাকে কখনো আবার সহানূভূতি জাগানোর নামে নিজেরদের সমর্থকদেরই হত্যা করে ফেলে দেওয়া হয় মাঝ রাস্তায়। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে এনায়েতপুরে মাওবাদীদের হামলার পর দূর্গসম পার্টি অফিসের ছবিটি, যেখানে মাওবাদী এবং সিপিএমের সংঘর্ষের কথা প্রকারন্তরে পুলিশও স্বীকার করে নিয়েছিল। এনায়েতপুরে বেস করে যে খুন-ধর্ষন-দখলদারির যাত্রাপথের সূচনাটা যে পথে হয়। তা হল
২. এনায়েতপুর-পিরাকাটা-ভীমপুর
৩. গোয়ালতোর-কাদাশোল-রামগড়-নেপুরা
৪. ধেরুয়া-বৈতা
৫. ঝাড়গ্রাম-জামবনি-চন্দ্রি
৬. ঝাড়গ্রাম-বিনপুর-শিলদা-বাঁশপাহাড়ি
বর্তমানে জঙ্গলমহলের ৯৩ টি ক্যাম্পে প্রায় ২০০০ হার্মাদ রয়েছে, যারা এলাকা দখলের সাথে সাথে খুন, যখম, লুটতরাজ, ধর্ষন ক্রমাগত চালিয়ে যাচ্ছে। আসুন এবার খরচ পাতির একটা একটা ছোট হিষাব কষা যাক। সরকার নির্দিস্ট দৈনিক ১২০ টাকা মজুরী বা ভাতা তার সাথে খাওয়াখরচ নিয়ে ১৫০ টাকা (বিনোদনমূলক খরচটা বাদ দিলাম) হার্মাদ পিছু দৈনিক খরচ ধরলে মোটামুটি ১ কোটি টাকা প্রতি মাসে (২০০০ জন হার্মাদ যেহেতু পার্টির অভিযানে নিয়োজিত) এবং একবছরে মোট খরচ ১২ কোটি টাকা। অনেকে আবার বলছেন ১৪ কোটি টাকা, তা সে ১২ কোটি হোক আর ১৪ কোটিই হোক এই বিপুল পরিমান খরচ কে করে?এখন আগেই লিখেছি এই টাকা কিভাবে আসে কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই এই টাকা আপনাদের আমাদের কস্টার্জিত টাকাই, আমরা না জেনেই এক প্রাইভেট আর্মির পিছনে খরচা করছি। আর কারচুপি করার পরেও যে টাকাটা ঘাটতি থেকে যায় সেটা পুষিয়ে নেয় সিপিএম পার্টি নিজে কারন সরকারী হিষাব অন্যযায়ী সর্বহারাদের পার্টি ভারতের চতুর্থ ধনী এবং সম্পদশালী পার্টি। এর পর আর নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না তাদের কালো টাকার পরিমানটা কত।
সাবেক কমিউনিস্ট দেশগুলিতে বা এখনো অনেক কমিউনিস্ট দেশে যেমন মিডিয়ার কন্ঠরোধ করে রাখা হয় তেমনি নন্দীগ্রামের সময়ে যা দেখেছি তাই আবার ফিরে আসে যখন নিজেদের অস্তিত্ব ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে জঙ্গলমহলে সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়। প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় সরাস্ট্রমন্ত্রী পি.চিদাম্বরম ও জানিয়েছেন জঙ্গলমহলে সিপিএমের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর ক্যাম্প আছে।
সিপিএমের ভৈরববাহিনীর এই তান্ডব দেখে একটা কথাই খালি মনে পরে তাহলে সালওয়া জুডুমের কি দোষ ছিল? আজ সিপিএম যখন সালোয়া জুডুমের পথেই হাটছে তাহলে কেন দ্বিচারিতা করে সর্বত্র কুম্ভীরাশ্রু বর্ষন করত। অবশ্য দ্বিচারিতা বোধহয় ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট দলগুলির রক্তে প্রবাহমান। তাহলে আমরা প্রশ্ন করব জঙ্গলমহলে সিপিএমের যে ১০০ এরো বেশী কর্মী খুন হয়েছেন সেটা কি ঠিক। না একেবারেই নয়। যে কোন হত্যাই নিন্দনীয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে সুপ্রীম কোর্ট সালওয়া জুডুমকে নিষিদ্ধ ঘোষনার সময় সরকারের সমলোচনা করে বলেছিলেন - It is a question of law and order. You cannot give arms to somebody (a civilian) and allow him to kill. You will be an abettor of the offence under Section 302 of the Indian Penal Code. তাহলে যারা ভৈরববাহিনীর পক্ষে সওয়াল করছেন তারা কেন সালোয়া জুডুম, রণবীর সেনাদের পক্ষেও সওয়াল করছেন না? তাহলে ভৈরববাহিনীর মতো একটি প্রাইভেট আর্মি নিয়োগকারী একটি সংসদীয় দল এবং সেই দল পরিচালিত সরকার দোষী নয় কেন? মাওবাদীরা বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসবাদী মেনে নিলাম কিন্তু তার জন্য আইন আছে, আদালত আছে, পুলিশ আছে, প্রাইভেট আর্মির প্রয়োজন কি? কারন সালওয়া জুডুম আর সিপিএমের মধ্যে কোন তফাৎই তো নেই।
‘সশস্ত্র অভিযান চলছে, আর কদিনের মধ্যেই লালগড়ের দখল করে নেব। ৯৩ টি সিপিএমের ক্যাম্প আছে তাতে ভয় কেন’- না কথাগুলো কোন ডাকাত ভা মাফিয়ার নয় এই রাজ্যের এক মন্ত্রীরই। তাহলে দেখুন গনতন্ত্রের কন্ঠরোধ করে যারা হায়নার হাসি হাসেন, যারা প্রকাশ্যে সশস্ত্র আন্দোলোনের কথা বলেন, হুমকি দেন, প্রতিমুহুর্তে গনতন্ত্রকে ধর্ষন করেন তারা নাকি সবচেয়ে বেশী গনতন্ত্রপ্রিয়। আসলে সংসদীয় গনতন্ত্রে ক্ষমতালাভ করে ক্ষমতার মধুভান্ড চেটেপুটে খেতে যারা সিদ্ধহস্ত তারা কতবড় গনতন্ত্রপ্রেমী সেটা পাঠকরাই তাদের বিবেক দিয়ে বিচার করবেন।
কিন্তু মাথায় রাখতে হবে সারা বাংলার মাটিতে মানুষের মনে যে পরিবর্তনের জোয়ার দেখা গয়েছে জঙ্গলমহলে যে কোন ভাবে একতরফা ক্ষমতা দখল করতে পারলেই মমতা ব্যানার্জীকে আটকানো সম্ভব। তাই সিপিএম ঠিক কিসের জন্য লড়ছে? যেনতেন প্রকারেন মমতাকে আসতে দেব না সে রকম লড়াই, তার জন্য যা দরকার করতে পারে সিপিএম।কিন্তু সিপিএম জানে মানুষ তার চরম জবাব দেবে ২০১১ তে। গনতন্ত্রের হত্যাকারীদের সন্ত্রাসের প্রতিরোধ করে জবাব দেবেন মানুষ বুলেটে নয় ব্যালটে। তাই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতার মসনদে আসীয়ান, ক্ষমতালোভী, মানবহত্যাকারী, গনতন্ত্রহত্যাকারী মেকী গরিবদরদী বামসরকারের যে সমূলে পতন ঘটবে সেঈ দেওয়াল লিখনটা স্পস্ট পড়া যাচ্ছে। আর সেটাই হবে বাংলার মাটিতে প্রকৃত চেতনার সুর্য্যদ্বয়।
![]() |
List of Armed Camps of CPIM Cadres in Jungal-Mahal,Block wise Data. |
Thursday, August 26, 2010
কাসভের মৃত্যুদন্ড : সাধারন মানুষের মানবাধিকার বনাম হন্তারকের মানবাধিকার- রেস্টোর ডেমোক্র্যাসি
'হামে বহুত কম লাগি,হামদোনো নারাজ হুয়ে।'হামদোনো বলতে বক্তা কাসাভ আর তার সঙ্গী আবু ইসমাইল। কম বলতে ৭ জন শিশু এবং বেশ কয়েকজন মহিলা ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সমেত ৭২ জন নিরপরাধ মানুষ, যাদের ওরা দুজন মিলে খুন করেছিল হিমশীতল রক্তে। কাসভদের ছিনতাই করা জাহাজের যে সারেং কাসভের মুখে নিজের হাতে রান্না করা অন্ন তুলে দিয়েছিল সেই সারেংকে গলা কেটে জবাই করেছিল হাসতে হাসতে। জলের আর এক নাম জীবন। নিরবিচ্ছিন্ন হত্যালীলায় তৃষ্ণার্ত কাসভের দিকে কামা হাসপাতালের যে ওয়ার্ডবয়টি কাঁপতে কাঁপতে জলের গ্লাস তুলে দিয়েছিল, জল পান করে তাকেও ঝাঁঝরা করে জীবনের বিনিময়ে তার হাতে মৃত্যু তুলে দিয়েছিল কাসভ পুলকিত হৃদয়ে। এদের কারো সঙ্গে আবু ইসমাইল বা কাসভের সুদূরতম শত্রুতা ছিল না, চিনত না পর্যন্ত। তুকারাম ওম্বালে বন্দুকের নল চেপে ধরে নিজের শরীরটা ঝাঁঝরা হতে দিয়েও কাসভকে সঙ্গী কন্সটেবলদের হাতে না তুলে দিলে পরের গুলিটা আমাকে বা আপনাকে ইহলোকের সীমানা পার করে দিত। এমনিই। কাসাভের কালান্তক কালাশনিকভ কেড়ে নেবার পর ওখানে মজুত পুলিশ এবং জনতা কাসাভকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিতে পারত। করেনি,দেশের আইনের ওপর ভরসা রেখেছিল ঐ রক্তাক্ত বীভৎসতার মধ্যেও। তুকারাম মরতে মরতেও সঙ্গীদের বলে গিয়েছিলেন- 'উসে জিন্দা পাকড়না হ্যায়, মত মারনা।' তার ভরসা ছিল, রাষ্ট্র এই নরঘাতককে শাস্তি দেবেই। কিন্তু তার আগে হত্যাকারীর কাছে ষড়যন্ত্রের পূর্ণ চিত্র জানা দরকার। কান টেনে মাথার হদিস পাওয়া দরকার। তাই নিজের জীবন বিপন্ন করেও তাকে জীবিত রাখা প্রয়োজন।
এরপর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত ক্রমশঃ এগোতে লাগলে সংবাদমাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম তাদের অভিসন্ধি ছিল বেপরোয়া হত্যালীলা চালিয়ে ভয়াবহ ত্রাস সৃষ্টির পর তাজ এবং ওবেরয়ের অসংখ্য দেশি বিদেশি অতিথিকে নিজেদের জিম্মায় রেখে ভারত সরকারকে তাদের সামনে নতজানু হতে বাধ্য করা। গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা ট্যাপ করা তাদের মোবাইল কথোপকথন থেকে স্পষ্ট হল যে,তাদের ধারনা ছিল ভারত রাষ্ট্র দূর্বল। সুতরাং ভয় দেখিয়ে ভারত সরকারকে ব্ল্যাকমেল করার ব্যাপারে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল। ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের বিমান ছিনতাই, কার্গিল অনুপ্রবেশ, মুফতি মহম্মদের কন্যা অপরহন ইত্যাদি বহু ঘটনায় বারবার এই প্রমাণ তারা অতীতে পেয়েছে। সুতরাং
বুঝতে অসুবিধা নেই ভারত রাষ্ট্রের দূর্বল চরিত্রই তাদের এই উচ্চাভিলাষের মূল উৎস।
তারা জানত দূর্বল চরিত্রের ভারতীয়দের দিয়ে ইচ্ছামত নিজেদের দাবীগুলো মানিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে গিয়ে তারা বীরের সম্মান পাবে । তাদের ধারনাটা খুব একটা ভিত্তিহীন ছিল এমনও কিন্তু নয়। কারন, অতীত ঘাঁটলে দেখা যাবে ভারত রাষ্ট্রের এই দূর্বল চরিত্রই কান্দাহার কান্ড ঘটিয়ে মাসুদ আজহারকে মুক্ত করার সাহস জুগিয়েছিল। মুক্ত মাসুদ আজহার বাল্মীকিতে পরিণত তো হয়ইনি বরং ফের ষড়যন্ত্র করে করে বহু ভারতীয়কে হত্যা করতে সফল হয়েছে। উচ্চ আদালতে কাসভের লঘুতর দন্ড এদের মুখের হাসি আরও চওড়া করবে সন্দেহ নেই। নতুন আশা জোগাবে তাদের সহযোদ্ধার মুক্তির, আত্মবিশ্বাস জোগাবে দ্বিধাগ্রস্ত দূর্বল ভারতের বুকে আবার একটা নতুনতর হামলা চালানোর। চলবে আরও একটা কান্দাহার কান্ড জাতীয় ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা। আবার এক মৃত্যুর তান্ডবলীলার সামনে ভীত, নতজানু ভারতের জেল থেকে কাসভের মুক্তি ঘটিয়ে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে বীরের মর্যাদা দেওয়া হলে আম ভারতীয় হয়তো এবার আর অবাক হবে না। এবং তারপর মাসুদ আজহারদের মতই মুক্ত কাসভ আবারও ভারতে নতুনতর নাশকতার পরিকল্পনার শরিক হওয়া তো সময়ের অপেক্ষা। অবিরাম চলতে থাকবে
আরও আরও হত্যা এবং হত্যাকারীর সামনে নতজানু হওয়ার দুষ্ট চক্র।
আরও আরও হত্যা এবং হত্যাকারীর সামনে নতজানু হওয়ার দুষ্ট চক্র।
কেউ কেউ বলছেন ফাঁসী দিলে কাসভ শহীদের মর্যাদা পেয়ে যাবে। তাতে আরও অনেকে ফিদায়েঁ জঙ্গী হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না ২৬/১১-র হামলায় এমনিতেই ৯ জন 'শহীদ' হয়ে গেছে। কাসভের মৃত্যু নতুন করে তাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে এমন সম্ভবনা কম। বরং কাসভ এই অবস্থা থেকে যদি জীবিত থেকে যায় বা কোনক্রমে মুক্তি পেয়ে যায় সেটাকেই তারা জেহাদের সাফল্য ভেবে উৎসাহিত হবার সম্ভবনা প্রবল। হয়তো জেহাদিরা দল ভারি করার জন্য তাদের নিজেদের কায়দায় প্রচার চালাবে, জেহাদে আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন তাই কাফেররা হাতের মুঠোয় পেয়েও সাজা দিতে পারল না। সব থেকে যেটা খারাপ হবে, শতসহস্র নিষ্পাপ মুসলিম কিশোরকিশোরী বা তরুণতরুণীর সামনে কাসভের উদাহরন রেখে তাদের মগজ ধোলাই করে সন্ত্রাসবাদী হামলায় টেনে আনার চেষ্টা করা হবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে,একজন জেহাদিকে মানুষের তৈরি আদালতে মানুষের তৈরি আইনে মানুষ কর্তৃক বিচার এবং মৃত্যুদন্ডদান, ধর্মের নামে জেহাদ এবং হত্যালীলা চালানোতে কোন ধর্মের কোন ঈশ্বরেরই সমর্থন নেই সেটা বুঝতে খানিকটা সাহায্য করতে পারে বৈকি।
এটা ঠিকই যে, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৫ নং ধারায় বলা হয়েছে, "কাউকে নির্যাতন করা যাবে না; কিংবা কারো প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না, অথবা কাউকে এহেন শাস্তি দেওয়া যাবে না।" কিন্তু ঐ ঘোষানাপত্রেরই ১১.২ ধারায় বলা হচ্ছে যে, "কাউকেই এমন কোন কাজ বা ত্রুটির জন্য দন্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না, যে কাজ বা ত্রুটি সংঘটনের সময় জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইনে দন্ডনীয় অপরাধ ছিল না। দন্ডনীয় অপরাধ সংঘটনের সময় যে শাস্তি প্রযোজ্য ছিল, তার চেয়ে গুরুতর শাস্তিও দেওয়া যাবে না।"
সুতরাং এর থেকে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, ৫নং ধারাটি মূলত সাধারন মানুষ এবং রাষ্ট্র কর্তৃক বেআইনিভাবে মানবাধিকার উল্লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। উদাহরন হিসাবে বলা যায়, গণআদালত বসিয়ে নির্যাতন, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রছাত্রীদের নির্যাতন বা পুলিশ বা সেনাবাহিনীর দ্বারা কোন অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধী অথবা সাধারন মানুষের ওপর দৈহিক অত্যাচার কিংবা হত্যার মত গুরুতর মানবাধিকার উল্লঙ্ঘনের রক্ষাকবচ হিসাবে এই ধারাটি রাখা হয়েছে। অপরদিকে যে সন্ত্রাসবাদী অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের জীবিত থাকার অধিকার সহ সমস্ত মানবিক অধিকার সম্পূর্ণ হরন করেছে, তাকে প্রতিহত করা এবং একই সঙ্গে এই ধরনের ব্যক্তি মানবজাতির স্বার্থে সম্পূর্ণ অবাঞ্ছীত সেই সত্য প্রতিষ্ঠা করাও রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। ১১.২ ধারায় জাতীয় আইন অনুযায়ী এই ধরনের অপরাধীর বিচার এবং উপযুক্ত শাস্তিদানকে বৈধতা দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। একই সঙ্গে এটা উল্লেখ করা জরুরী যে এই ঘোষনাপত্রে কোথাও সরাসরি মৃত্যুদন্ডের বিরোধীতা করা নেই। কিন্তু অপরাধী যাতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সমস্তরকম সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।সুতরাং রাষ্ট্রসঙ্ঘের ঘোষণাপত্রের ৫নং ধারাটি আসলে আমার আপনার মত ছা-পোষা সাধারন মানুষ যারা সবথেকে বেশি সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িক ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হন তাঁদের মানবাধিকার রক্ষার কথাই বলতে চেয়েছে। এবং একই সঙ্গে যারা সেই মানবাধিকার উল্লঙ্ঘন করবে তাদের দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তির কথাও বলা হয়েছে ঘোষণাপত্রটিতে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর রাষ্ট্রসঙ্ঘে ইটালি ও চিলি যৌথভাবে যে সব দেশে প্রাণদন্ড চালু আছে, তাদের প্রাণদন্ড স্থগিত রাখার প্রস্তাব আনলে ৯৯টি দেশ তা সমর্থন করলেও ভারত সমেত ৫২টি দেশ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয় ও ৩৩টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। মনে রাখা দরকার ঐ ৯৯ টি দেশের মধ্যে ৯৫টি দেশ ইতিমধ্যেই প্রাণদন্ড বিলোপ করেছে তাদের দেশে। অর্থাৎ নতুন করে মাত্র ৪ টি দেশ প্রাণদন্ড স্থগিত রাখার প্রস্তাবের স্বপক্ষে সায় দেয়। ঐ সালেরই ১৮ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রসঙ্ঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে পুনরায় এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হলে প্রস্তাবের পক্ষে মোট ১০৪টি ভোট পড়ে ও বিপক্ষে ৫৪টি ভোট পড়ে।
এটা থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদন্ড বন্ধ করার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। কিন্তু পাশাপাশি এটাও না বললে নয় যে,আমেরিকা, ভারত, চিন, পাকিস্তান সমেত যে দেশগুলি মৃত্যুদন্ড তুলে দেওয়া বা স্থগিত রাখার বিপক্ষে সেই দেশগুলির মোট জনসংখ্যা যারা মৃত্যুদন্ড স্থগিত রাখতে চায় তাদের থেকে অনেক বেশি। খুব সম্ভবত জনসংখ্যার এই ব্যাপক চাপ এবং তার কারনে অপরাধ সংখ্যার ক্রমবর্ধনতা এই দেশগুলোর অধিকাংশের মৃত্যুদন্ড তুলে না দেওয়ার একটা বড় কারন। আবার এই দেশুগলোর কয়েকটি ধর্মীয় আইন দ্বারা চালিত যেখানে শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদন্ড ও অঙ্গচ্ছেদ বিচারব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শুধুমাত্র ২০০৯ সালেই চিনে এক হাজারের বেশি (অনেকের মতে সংখ্যাটা দশ হাজার) জনের, আমেরিকাতে ৫২ জন, এমনকি বাংলাদেশেও ৩জন ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। অন্যদিকে ভারতে ১৯৯৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত এই ১৫ বছরের মধ্যে ২০০৪ সালে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় ছাড়া কারোর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় নি, যেখানে কাসভ সমেত ৫২ জন ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া সরকারি সম্মতি বা রাষ্ট্রপতির সম্মতির প্রতীক্ষায় ঝুলে রয়েছে।
সুতরাং, ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘে মৃত্যুদন্ড স্থগিত রাখার বিপক্ষে ভোট দিলেও ভারত সরকার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ব্যাপারে বিভিন্ন কারনে দ্বিধাগ্রস্ত এটা সুস্পষ্ট। বিচারব্যবস্থা যে শাস্তি ধার্য করে তার ওপর রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কতটা বাঞ্ছিত তা নিয়ে বিতর্ক আছে এবং তা প্রসঙ্গান্তরে আলোচনা করা যাবে। কিন্তু, কাসভের মৃত্যুদন্ড এমনকি উচ্চআদালত ধার্য করলেও শেষ পর্যন্ত কবে কার্যকর হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়।
এটা আশাকরি সকলেই স্বীকার করবেন ২৬/১১র মত ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলার বিচার করতে গিয়ে পৃথিবীর যে কোন দেশের আদালত সেই দেশের সর্বোচ্চ শাস্তিই দেবে। তা যাবজ্জীবন কারাদন্ডই হোক বা মৃত্যুদন্ড। কারন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে শাস্তি দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্র এটাও চাইবে তার আইনি কাঠামোর ওপর যে সাধারন নাগরিকরা ভরসা রাখেন তাঁদের সুবিচার প্রদান করে রাষ্ট্রের ওপর তাদের আস্থা এবং নিজের বৈধতা অটুট রাখতে। অর্থাৎ, দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নাগরিকদের মানবাধিকারের ওপর আঘাতকে রাষ্ট্র যে বরদাস্ত করে না সেটা সে প্রমান করবে অপরাধিকে যথোপযুক্ত শাস্তিদানের মাধ্যমে। তাই যতদিন আমাদের দেশে মৃত্যুদন্ড সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে থাকবে ততদিন কাসভের মত অপরাধীরা সেই শাস্তিই পাবেন। যদি ভবিষ্যতে কখনো আমাদের দেশে মৃত্যুদন্ডবিলোপ করা হয় তাহলেও হয়তো এই পর্যায়ের অপরাধীকে আমৃত্যু কারাগারে বন্দী জীবন যাপন করতে হবে (সেটা কতখানি মানবিক তা অবশ্য মৃত্যুদন্ড বিরোধী মানবাধিকার কর্মীরাই বলতে পারবেন), কারন যেকোন দেশের আইনে অত্যাচারীর থেকে অত্যাচারীতের, হত্যাকারীর থেকে হতর এবং তাদের সম্ভাব্য শিকারদের মানবাধিকারের গুরুত্ব অনেক বেশি।
Friday, August 13, 2010
সাঁইবাড়ি : এক রক্তাক্ত অধ্যায় - রেস্টোর ডেমোক্র্যাসি
"মুখোশগুলো খুলে নেব
বাদাম থেকে খোশার মতো
এ আমাদের অঙ্গীকার
ক্রোধের শালিক পোষার মতো
এ আমাদের অঙ্গীকার।"
১৯৬৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারী বাংলা কংগ্রেসের নেতা অজয় মুখোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকা ক্ষমতায় আসার পর থেকে পশ্চিমবাংলায় সিপিএমের অত্যাচার চরমে উঠেছিল। যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যোতি বসু সিপিএম পার্টির সমস্ত অনাচার অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রর মত উপেক্ষা করে ক্ষমতা ভোগ করতেন। শেষে অবস্থা এতটাই চরমে উঠল যে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জী নিজেরই সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে বললেন, 'এই অসভ্য বর্বর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে থাকতে চাই না'এবং পত্রপাঠ ১৬ই মার্চ, ১৯৭০-এ সিপিএমের উচ্ছৃঙ্খলায় বিরক্ত হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।যুক্তফ্রন্ট
সরকারের পতনের ফলে বাংলায় কংগ্রেস সমর্থকরা যতটা উল্লসিত হয়ে ওঠেন, আচমকা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ার আক্রোশে সিপিএম ঠিক ততটাই ফুঁসতে থাকে।
বর্ধমানে সেই সময় কংগ্রেসের দূর্গ টিকিয়ে রেখেছিলেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাঁই পরিবার। সাঁইরা ছিল বর্ধমানের বড় জোতদার এবং পুরোনো কংগ্রেসি। সেই সময় বর্ধমানে যখন সিপিএম প্রায় একাধিপত্য স্থাপন করে ফেলতে চাইছে তখন সাঁইবাড়ি একরকম শেষ কংগ্রেসি দূর্গ ছিল বলা যায়। সাঁইরা ছিল সাত বোন পাঁচ ভাই- প্রণব, মলয়, নবকুমার, উদয় এবং বিজয়। অভিযোগ, ১৯৬৯ সালের ১১ই ডিসেম্বর বর্ধমানের আলমগঞ্জে কংগ্রেসের সক্রিয় সমর্থক ইন্দ্রভূষণ গড়িয়াকে সিপিএম সমর্থকরা বোমা মেরে খুন করে। সেই হত্যামামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল সাঁই পরিবার। ১৬ই মার্চ গোটা
রাজ্যের মতো বর্ধমানের কংগ্রেসীরা যুক্তফ্রন্টের পতনে আনন্দিত হয়ে একটা মিছিল বার করে এবং স্বাভাবিক ভাবেই সাঁইরা তাতে অংশগ্রহন করে। নেহাতই নিজেদের অভ্যন্তরীন কোঁদলে যুক্তফ্রন্টের পতনের ফলে উৎফুল্ল কংগ্রেসীদের আনন্দ দেখে ফুঁসতে থাকা সিপিএম ১৭ই মার্চ বাংলা জুড়ে বনধ্ ডাকে, একই সঙ্গে প্রতিশোধস্পৃহা গ্রাস করে তাদের।
ঠিক, ১৭ই মার্চ সাঁইবাড়িতে এক নবজাত শিশু অমৃতের নামকরণ উৎসব ছিল। আচমকা বনধ্ ডাকা হলেও যেহেতু অনুষ্ঠানটি আগে থেকে ঠিক করা এবং কেউ কেউ ইতিমধ্যেই চলে এসেছেন তাই অনুষ্ঠানে কাজকর্ম যথারীতি চলতে থাকে। ঐ দিন সকাল ১০টা নাগাদ সিপিএমের একটা ৫০-৬০ জনের মিছিল বড় রাস্তা ছেড়ে তেলমারুই রোডে সাঁইবাড়ির সরু গলিতে এসে ঢোকে। এইরকম মিছিল আসছে দেখে মলয় প্রণব সাঁই-এর মা মৃগনয়না দেবী ভয় পেয়ে বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেন। এই সময় কারা যেন বলে মিছিলে একটা ইট এসে পড়েছে এবং সেটা পড়েছে সাঁই বাড়ির দিক থেকে। চারিদিকে হইচৈ বেধে যায়। পরিকল্পিত ভাবে দাবানলের মত গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়, সিপিএমের মিছিলে বোমা মেরেছে সাঁই বাড়ির লোকেরা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো গুজবের আগুনে বহুরূপী 'ইট' কখনো হয়ে যায় 'বোমা' কখনো বা 'গরম ফ্যান'। সেই সময় বর্ধমানের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে আদিবাসী লোকজনের ওপর সিপিএমের এতটাই প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছিল যে তারা সিপিএম নেতাদের মুখের কথা বেদবাক্যের থেকেও দামী মনে করত। এখন কিছুটা কমলেও অনেক জায়গাতেই বছর দশেকে আগেও এরকম প্রভাব ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগে থেকে সাঁইভাইদের সিপিএম বিরোধীতার চরম শিক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে থাকা প্রায় দেড় হাজার সিপিএম সমর্থক দিকবিদিক থেকে ছুটে এসে তীর ধনুক, টাঙ্গি,বল্লম ইত্যাদি নিয়ে সাঁই বাড়ি ঘিরে ফেলে। ভেঙ্গে ফেলে আতঙ্কিত বাসিন্দাদের আত্মরক্ষার্থে বন্ধ করে রাখা বাড়ির সদর দরজা।
এরপরের পৈশাচিক ঘটনাবলীর কথা অনেকেই জানেন। নারকীয় ভাবে বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে খাটের তলা থেকে বার করে খুন করা হয় প্রণব সাঁইকে। ওদের বাড়ির এক দিদিকে বাড়ির উঠোনে চিত করে ফেলে তাকে ঐ অবস্থায় চেপে ধরে তার ছোট ভাই যে বয়সে নিতান্তই তরুণ মলয় সাঁইকে তার ওপর উপুর করে ফেলা হয়। তারপর তার গলা হেঁসো (বড় কাস্তে) দিয়ে দু ফাঁক করে দেওয়া হয় দিদির চোখের সামনে। ফিনকি দিয়ে রক্ত দিদির মুখের ওপর ছিটকে পড়ে, কিছুক্ষণ পরে নিথর হয়ে যায় ভাই এর দেহ। বাড়ির গৃহশিক্ষক জীতেন্দ্রনাথ রায় জীবন বাঁচানোর তাগিদে রান্না ঘরের পাশের পাঁচিল দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ভাতের ফ্যানে পা পিছলে পড়ে যান। তাঁকেও কুপিয়ে খুন করা হয়। শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিনিধি বলে বাগড়ম্বর করা সিপিএমের কমরেডরা বাড়ির দুজন পরিচারকের মাথাও কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে ফেলে। দুজনেই পরের দিন হাসপাতালে মারা যান। এরপর ছেলেদের রক্তমাখা ভাত মৃগনয়না দেবীর মুখে গুঁজে দেয় সিপিএমের বীরপুঙ্গবরা। মৃত ছেলেদের রক্ত ছিটিয়ে দেয় আতঙ্কে স্তব্ধ মায়ের গায়ে। এত কিছুর পরেও আক্রোশ হয়তো মেটেনি, তাই যাওয়ার আগে নরপিশাচরা রান্না ঘরের উনুনে ছুঁড়ে দিয়ে যায় তিনমাসের নিষ্পাপ অসহায় শিশু অমৃতকে, যে পরে হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর কোনক্রমে প্রাণে বেঁচে
যায়।
ঐ দিন দুপুর সাড়ে বারোটায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে দিলীপ কুমার ভট্টাচার্যের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বর্ধমান থানায়। ঐ অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন (কেস নং-৫০, ১৭/০৩/১৯৭০, বর্ধমান থানা) বর্ধমানের তৎকালীন ওসি চিত্ত মুখোপাধ্যায়। মামলা রুজু হয় ১৪৮/১৪৯/৩০৭/৩০২/৪৩৬/৩৮০ ধারায়। এই ঘটনার সাক্ষী খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল হয়েছিল পুলিশের পক্ষে যেহেতু ঘটনাস্থলে সকলেই সিপিএমের লোক ছিল, সাধারন মানুষ ভয়ে তল্লাট ফাঁকা করে পালিয়েছিল কিংবা ঘরে দরজা বন্ধ করে বসেছিল। সমস্ত দোকানের ঝাঁপ পড়ে গিয়েছিল। যারা কৌতূহল বশতঃ ঘটনা প্রত্যক্ষ করার সাহস করেছিল ভয়াবহ হিমশীতল আতঙ্ক তাদের মুখ সেলাই করে রেখেছিল। তবু অনেক
কষ্টে পুলিশ ৭৮ জনকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য প্রাথমিক ভাবে রাজি করায়। ১৯৭০ সালের ৬ই জুন বর্ধমান টাউন হলে 'মুখার্জী কমিশন'বসেন সাঁইবাড়ি হত্যার তদন্ত করার জন্য। সেই তদন্ত কমিশনেরসামনে সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী গুলমনী রায়কে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয়। সাঁইবাড়ির সদস্যদের এবং সাক্ষীদের ওপর সাক্ষ্য না দেওয়ার এবং কেস তুলে নেওয়ার জন্য প্রচন্ড চাপ আসতে থাকে। চাপের মুখে মাথা নোয়াতে না চাওয়ার শাস্তি হিসাবে ঠিক গুলমনী রায়ের মতই সাঁইবাড়ির এক ছেলে নবকুমার সাঁইকে রায়নার আহ্লাদিপুরে টাঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। এর ফলে সমস্ত সাক্ষী ভয়ানক ভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তদন্তের কাজ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। এতদসত্বেও পরবর্তীকালে মামলার তদন্ত যত এগোতে থাকে তদন্তকারীদের সামনে মূল দোষী রাঘববোয়ালদের নাম উঠে আসে। সরাসরি খুন করার জন্য অভিযুক্ত হন সিপি(আই)এম দলের পাঁচ নেতা- মেমারির তৎকালীন বিধায়ক বিনয় কোঙার, খোকন সেন ওরফে নিরুপম সেন, হুগলীর চুঁচুড়ার আরও কয়েকটি কয়েকটি খুনের মামলার আসামী মানিক রায়,সিপিএম নেতা অমল হালদার এবং সেই সময় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই নেতা পল্টু ব্যানার্জী ওরফে রজত বন্দ্যোপাধ্যায়- যে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পরীক্ষার সাতটি পেপারের পরীক্ষা দিলেও ঠিক ১৭ই মার্চ, ১৯৭০ এর পর থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় অষ্টম পেপারের পরীক্ষাটি দিয়ে উঠতে পারেনি।
পুরো হত্যাকান্ডে এবং ষড়যন্ত্রে এদের ভূমিকা স্পষ্ট হওয়ার পর আসানসোল ডিডিআই ১৯৭১ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারী সিপিএমের ঐ পঞ্চরত্ন সমেত মোট ১১১ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেন। বর্ধমান দায়রা আদালতে মামলা চলাকালীন সাক্ষীদের ক্রমাগত হুমকি, চাপ এবং উল্টোদিকে জনগণের মনে বাড়তে থাকা
অসন্তোষের কারনে মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদনের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট ১৯৭৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আলিপুর দায়রা আদালতে মামলাটি স্থানান্তরিত করার আদেশ দেন এবং তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারক গীতেশ ভট্টাচার্যের এজলাসে শুনানি শুরু হয়।
এরপর ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গের মসনদে বসতেই শুরু হয় আসল খেলা। বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চলে আদালতের পিছনের দরজা দিয়ে নৃশংস খুনের দায়ে অভিযুক্ত কমরেডদের বের করে নিয়ে আসার মরিয়া প্রয়াস। সরকারের তরফে প্রধান কৌঁশুলি হিসাবে মামলা লড়ছিলেন জ্যোতির্ম্ময় রায়চৌধুরী। তাঁর সহকারী কৌঁশুলি হিসাবে ছিলেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত। সাক্ষীদের ভয়দেখানো ও নানাভাবে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি চলছিল সরকারী কৌঁশুলীদের ওপরও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল সমানে। ভেবে দেখুন যে সরকার নিহত ব্যক্তিদের হয়ে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা লড়ছে সেই হত্যাকারীদের কমরেডরাই ক্ষমতায় এসে বিচার ব্যবস্থাকে পিছন থেকে ছুড়ি মেরে হত্যাকারীদের খালাস করিয়ে দিতে চাইছে! বিচারব্যবস্থার সঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের নির্লজ্জ ব্যভীচারের প্রতিবাদে ইস্তফা দেন সরকারের তরফে সহকারী কৌঁশুলী নরেন্দ্রনাথ দত্ত। কিন্তু এতে শাপে বর হল বামফ্রন্টের। নরেন্দ্রবাবুর পদে সরকারী কৌঁশুলী হিসাবে নিয়োগ করা হল দক্ষিণ কলকাতার সিপিএম নেতা অসিত গঙ্গোপাধ্যায়কে।
এরপর পথের ছোটোখাটো কাঁটাগুলিকে সরিয়ে হত্যাকারীদের মুক্তি ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সরকারের তরফে সরকারি কৌঁশুলি ১৯৭৭ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর তারিখে সিপিএমের 'পঞ্চরত্ন' সমেত ৮৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন করলে বিচারপতি ৩০শে সেপ্টেম্বরের গীতেশরঞ্জন ভট্টাচার্য চারজনের জন্য তা মঞ্জুর করলেও তা বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা তোলার আবেদন পুরোপুরি খারিজ করে রায় দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে হাইকোর্টও হত্যাকরীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের সরকারি আবেদন পুনরায় খারিজ করে দেন।
চাল ভেস্তে যাওয়ায় বামফ্রন্ট সরকার একই খেলা অন্য ছকে খেলার পরিকল্পনা ফাঁদে। এবার টার্গেট করা হয় অভিযোগকারী এবং মূল সাক্ষীদের। যে সরকারি কৌঁশুলিদের সাক্ষীদের সাহায্যে আদালতে সত্য প্রমাণের দায়িত্ব ছিল, তাঁরাই অভিযোগকারী দিলীপ ভট্টাচার্যকে এবং অন্যতম প্রধানসাক্ষী ইতিকা দত্তকে দিয়ে লিখিয়ে নেন যে তাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী নন। সাঁই পরিবারের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি, হত্যার হুমকী, নবকুমার সাঁই এর হত্যা, হত্যাকান্ডের ভয়বহতায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এক ভাই উদয় সাঁই এর উন্মাদগ্রস্ত হয়ে পড়া এবং কার্যত শ্মশানে পরিণত হওয়া সাঁইবাড়িতে জীবিত দুই ভাই-এর অন্যতম বিজয় সাঁই বা তার দিদি স্বর্ণলতা দেবী এবং জামাইবাবু অমলাকান্ত যশদের সামনে সরকার এবং সাঁইবাড়িকে শ্মশানে পরিণত করে বর্ধমানকে সিপিএমের দূর্গে পরিণত করা বর্ধমানের একচ্ছত্র অধিপতি সিপিএমের ক্রমাগত দ্বিমুখী চাপ ও হুমকির সামনে মাথা নোয়ানো ছাড়া আর কোন রাস্তা রইল না।
তাদেঁর বুকে পাথর চাপা দেওয়া দীর্ঘশ্বাস আর অশ্রুজল পান করে জীবিত থাকার অন্তহীন নরকযন্ত্রণার বিনিময়ে সিপিএমের জহ্লাদেরা মুক্তি পেল ১৯৭৮ সালের ৬ই মে। বাম সরকারের আটঘাট বেঁধে (হ্যাঁ,
ততদিনে আলিপুর তৃতীয় দায়রা আদালতের বিচারপতিও বদল হয়ে গেছে!) মোকোদ্দমা প্রত্যাহারের আবেদন আর ফেরানো সম্ভব হল না বিচারপতি করের পক্ষে। বাম সরকারের লাল শালুতে রক্তাক্ত হাত মুছে আদালতের খিড়কী দরজা দিয়ে বেরিয়ে সদর্পে রাজপথে উঠে এল হত্যাকারীরা, তুলে নিল রাজ্যের শাসনভার। পড়ে রইল জনমানবহীন খন্ডহরে পরিণত হওয়া সাঁইবাড়ির হাহাকার আর বর্ধমানের রাস্তায় রাস্তায় উন্মাদ হয়ে যাওয়া উদয় সাঁই-এর আর্তচিৎকার।
Subscribe to:
Posts (Atom)