Thursday, August 26, 2010

কাসভের মৃত্যুদন্ড : সাধারন মানুষের মানবাধিকার বনাম হন্তারকের মানবাধিকার- রেস্টোর ডেমোক্র্যাসি

'হামে বহুত কম লাগি,হামদোনো নারাজ হুয়ে।'হামদোনো বলতে বক্তা কাসাভ আর তার সঙ্গী আবু ইসমাইল। কম বলতে ৭ জন শিশু এবং বেশ কয়েকজন মহিলা ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সমেত ৭২ জন নিরপরাধ মানুষ, যাদের ওরা দুজন মিলে খুন করেছিল হিমশীতল রক্তে। কাসভদের ছিনতাই করা জাহাজের যে সারেং কাসভের মুখে নিজের হাতে রান্না করা অন্ন তুলে দিয়েছিল সেই সারেংকে গলা কেটে জবাই করেছিল হাসতে হাসতে। জলের আর এক নাম জীবন। নিরবিচ্ছিন্ন হত্যালীলায় তৃষ্ণার্ত কাসভের দিকে কামা হাসপাতালের যে ওয়ার্ডবয়টি কাঁপতে কাঁপতে জলের গ্লাস তুলে দিয়েছিল, জল পান করে তাকেও ঝাঁঝরা করে জীবনের বিনিময়ে তার হাতে মৃত্যু তুলে দিয়েছিল কাসভ পুলকিত হৃদয়ে।  এদের কারো সঙ্গে আবু ইসমাইল বা কাসভের সুদূরতম শত্রুতা ছিল না, চিনত না পর্যন্ত। তুকারাম ওম্বালে বন্দুকের নল চেপে ধরে নিজের শরীরটা ঝাঁঝরা হতে দিয়েও কাসভকে সঙ্গী কন্সটেবলদের হাতে না তুলে দিলে পরের গুলিটা আমাকে বা আপনাকে ইহলোকের সীমানা পার করে দিত। এমনিই। কাসাভের কালান্তক কালাশনিকভ কেড়ে নেবার পর ওখানে মজুত পুলিশ এবং জনতা কাসাভকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিতে পারত। করেনি,দেশের আইনের ওপর ভরসা রেখেছিল ঐ রক্তাক্ত বীভৎসতার মধ্যেও। তুকারাম মরতে মরতেও সঙ্গীদের বলে গিয়েছিলেন- '‌‌উসে জিন্দা পাকড়না হ্যায়, মত মারনা।' তার ভরসা ছিল, রাষ্ট্র এই নরঘাতককে শাস্তি  দেবেই। কিন্তু তার আগে হত্যাকারীর কাছে ষড়যন্ত্রের পূর্ণ চিত্র জানা দরকার। কান টেনে মাথার হদিস পাওয়া দরকার। তাই নিজের জীবন বিপন্ন করেও তাকে জীবিত রাখা প্রয়োজন।


এরপর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত ক্রমশঃ এগোতে লাগলে সংবাদমাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম তাদের অভিসন্ধি ছিল বেপরোয়া হত্যালীলা চালিয়ে ভয়াবহ ত্রাস সৃষ্টির পর তাজ এবং ওবেরয়ের অসংখ্য দেশি বিদেশি অতিথিকে নিজেদের জিম্মায় রেখে ভারত সরকারকে তাদের সামনে নতজানু হতে বাধ্য করা। গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা ট্যাপ করা তাদের মোবাইল কথোপকথন থেকে স্পষ্ট হল যে,তাদের ধারনা ছিল ভারত রাষ্ট্র দূর্বল। সুতরাং ভয় দেখিয়ে ভারত সরকারকে ব্ল্যাকমেল করার ব্যাপারে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল। ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের বিমান ছিনতাই, কার্গিল অনুপ্রবেশ, মুফতি মহম্মদের কন্যা অপরহন ইত্যাদি বহু ঘটনায় বারবার এই প্রমাণ তারা অতীতে পেয়েছে। সুতরাং
বুঝতে অসুবিধা নেই ভারত রাষ্ট্রের দূর্বল চরিত্রই তাদের এই উচ্চাভিলাষের মূল উৎস।
 ‌‌‍‌


তারা জানত দূর্বল চরিত্রের ভারতীয়দের দিয়ে ইচ্ছামত নিজেদের দাবীগুলো মানিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে গিয়ে তারা বীরের সম্মান পাবে । তাদের ধারনাটা খুব একটা ভিত্তিহীন ছিল এমনও কিন্তু নয়। কারন, অতীত ঘাঁটলে দেখা যাবে ভারত রাষ্ট্রের এই দূর্বল চরিত্রই কান্দাহার কান্ড ঘটিয়ে মাসুদ আজহারকে মুক্ত করার সাহস জুগিয়েছিল। মুক্ত মাসুদ আজহার বাল্মীকিতে পরিণত তো হয়ইনি বরং ফের ষড়যন্ত্র করে করে বহু ভারতীয়কে হত্যা করতে সফল হয়েছে। উচ্চ আদালতে কাসভের লঘুতর দন্ড এদের মুখের হাসি আরও চওড়া করবে সন্দেহ নেই। নতুন আশা জোগাবে তাদের সহযোদ্ধার মুক্তির, আত্মবিশ্বাস জোগাবে দ্বিধাগ্রস্ত দূর্বল ভারতের বুকে আবার একটা নতুনতর হামলা চালানোর। চলবে আরও একটা কান্দাহার কান্ড জাতীয় ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা। আবার এক মৃত্যুর তান্ডবলীলার সামনে ভীত, নতজানু ভারতের জেল থেকে কাসভের মুক্তি ঘটিয়ে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে বীরের মর্যাদা দেওয়া হলে আম ভারতীয় হয়তো এবার আর অবাক হবে না। এবং তারপর মাসুদ আজহারদের মতই মুক্ত কাসভ আবারও ভারতে নতুনতর নাশকতার পরিকল্পনার শরিক হওয়া তো সময়ের অপেক্ষা। অবিরাম চলতে থাকবে
আরও আরও হত্যা এবং হত্যাকারীর সামনে নতজানু হওয়ার দুষ্ট চক্র।



কেউ কেউ বলছেন ফাঁসী দিলে কাসভ শহীদের মর্যাদা পেয়ে যাবে। তাতে আরও অনেকে ফিদায়েঁ জঙ্গী হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না ২৬/১১-র হামলায় এমনিতেই ৯ জন 'শহীদ' হয়ে গেছে। কাসভের মৃত্যু নতুন করে তাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে এমন সম্ভবনা কম। বরং কাসভ এই অবস্থা থেকে যদি জীবিত থেকে যায় বা কোনক্রমে মুক্তি পেয়ে যায় সেটাকেই তারা জেহাদের সাফল্য ভেবে উৎসাহিত হবার সম্ভবনা প্রবল। হয়তো জেহাদিরা দল ভারি করার জন্য তাদের নিজেদের কায়দায় প্রচার চালাবে, জেহাদে আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন তাই কাফেররা হাতের মুঠোয় পেয়েও সাজা দিতে পারল না। সব থেকে যেটা খারাপ হবে, শতসহস্র নিষ্পাপ মুসলিম কিশোরকিশোরী বা তরুণতরুণীর সামনে কাসভের উদাহরন রেখে তাদের মগজ ধোলাই করে সন্ত্রাসবাদী হামলায় টেনে আনার চেষ্টা করা হবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে,একজন জেহাদিকে মানুষের তৈরি আদালতে মানুষের তৈরি আইনে মানুষ কর্তৃক বিচার এবং মৃত্যুদন্ডদান, ধর্মের নামে জেহাদ এবং হত্যালীলা চালানোতে কোন ধর্মের কোন ঈশ্বরেরই সমর্থন নেই সেটা বুঝতে খানিকটা সাহায্য করতে পারে বৈকি।




অপরদিকে মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধেও যুক্তি প্রচুর। আজকের পৃথিবীর বহু রাষ্ট্র, সাধারন মানুষ এবং মানবাধিকার সংস্থা আজ হত্যার বদলে আরও একটি  হত্যার মাধ্যমে অপরাধিকে শাস্তি দানের বিরুদ্ধে।  অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা মৃত্যুদন্ডের পুরোপুরি বিরুদ্ধে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পরিষ্কার বলছে, "The death penalty is the ultimate denial of human rights. It is the premeditated and cold-blooded killing of a human being by the state. This cruel, inhuman and degrading punishment is done in the name of justice." একই সঙ্গে মৃত্যুদন্ড রাষ্ট্রসঙ্ঘের "মানবাধিকারের সার্বজনীণ ঘোষণাপত্র"-তে বলা জীবনের অধিকারকেও উল্লঙ্ঘন করছে বলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলি এবং তার সমর্থকরা দাবি করেন।

এটা ঠিকই যে, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৫ নং ধারায় বলা হয়েছে, "কাউকে নির্যাতন করা যাবে না; কিংবা কারো প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না, অথবা কাউকে এহেন শাস্তি দেওয়া যাবে না।" কিন্তু ঐ ঘোষানাপত্রেরই ১১.২ ধারায় বলা হচ্ছে যে, "কাউকেই এমন কোন কাজ বা ত্রুটির জন্য দন্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না, যে কাজ বা ত্রুটি সংঘটনের সময় জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইনে দন্ডনীয় অপরাধ ছিল না। দন্ডনীয় অপরাধ সংঘটনের সময় যে শাস্তি প্রযোজ্য ছিল, তার চেয়ে গুরুতর শাস্তিও দেওয়া যাবে না।"


সুতরাং এর থেকে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, ৫নং ধারাটি মূলত সাধারন মানুষ এবং রাষ্ট্র কর্তৃক বেআইনিভাবে মানবাধিকার উল্লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। উদাহরন হিসাবে বলা যায়, গণআদালত বসিয়ে নির্যাতন, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রছাত্রীদের নির্যাতন বা পুলিশ বা সেনাবাহিনীর দ্বারা কোন অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধী অথবা সাধারন মানুষের ওপর দৈহিক অত্যাচার কিংবা হত্যার মত গুরুতর মানবাধিকার উল্লঙ্ঘনের রক্ষাকবচ হিসাবে এই ধারাটি রাখা হয়েছে। অপরদিকে যে সন্ত্রাসবাদী অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের  জীবিত থাকার অধিকার সহ সমস্ত মানবিক অধিকার সম্পূর্ণ হরন করেছে, তাকে প্রতিহত করা এবং একই সঙ্গে এই ধরনের ব্যক্তি মানবজাতির স্বার্থে সম্পূর্ণ অবাঞ্ছীত সেই সত্য প্রতিষ্ঠা করাও রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। ১১.২ ধারায় জাতীয় আইন অনুযায়ী এই ধরনের অপরাধীর বিচার এবং উপযুক্ত শাস্তিদানকে বৈধতা দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। একই সঙ্গে এটা উল্লেখ করা জরুরী যে এই ঘোষনাপত্রে কোথাও সরাসরি মৃত্যুদন্ডের বিরোধীতা করা নেই। কিন্তু অপরাধী যাতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সমস্তরকম সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।সুতরাং রাষ্ট্রসঙ্ঘের ঘোষণাপত্রের ৫নং ধারাটি আসলে আমার আপনার মত ছা-পোষা সাধারন মানুষ যারা সবথেকে বেশি সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িক ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হন তাঁদের মানবাধিকার রক্ষার কথাই বলতে চেয়েছে। এবং একই সঙ্গে যারা সেই মানবাধিকার উল্লঙ্ঘন করবে তাদের দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তির কথাও বলা হয়েছে ঘোষণাপত্রটিতে।




এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর রাষ্ট্রসঙ্ঘে ইটালি ও চিলি যৌথভাবে  যে সব দেশে প্রাণদন্ড চালু আছে, তাদের প্রাণদন্ড স্থগিত রাখার প্রস্তাব আনলে ৯৯টি দেশ তা সমর্থন করলেও ভারত সমেত ৫২টি দেশ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয় ও ৩৩টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। মনে রাখা দরকার ঐ ৯৯ টি দেশের মধ্যে ৯৫টি দেশ ইতিমধ্যেই প্রাণদন্ড বিলোপ করেছে তাদের দেশে। অর্থাৎ নতুন করে মাত্র ৪ টি দেশ প্রাণদন্ড স্থগিত রাখার প্রস্তাবের স্বপক্ষে সায় দেয়। ঐ সালেরই ১৮ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রসঙ্ঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে পুনরায় এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হলে প্রস্তাবের পক্ষে মোট ১০৪টি ভোট পড়ে ও বিপক্ষে ৫৪টি ভোট পড়ে।


এটা থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদন্ড বন্ধ করার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। কিন্তু পাশাপাশি এটাও না বললে নয় যে,আমেরিকা, ভারত, চিন, পাকিস্তান সমেত যে দেশগুলি মৃত্যুদন্ড তুলে দেওয়া বা স্থগিত রাখার বিপক্ষে সেই দেশগুলির মোট জনসংখ্যা যারা মৃত্যুদন্ড স্থগিত রাখতে চায় তাদের থেকে অনেক বেশি। খুব সম্ভবত জনসংখ্যার এই ব্যাপক চাপ এবং তার কারনে অপরাধ সংখ্যার ক্রমবর্ধনতা এই দেশগুলোর অধিকাংশের মৃত্যুদন্ড তুলে না দেওয়ার একটা বড় কারন। আবার এই দেশুগলোর কয়েকটি ধর্মীয় আইন দ্বারা চালিত যেখানে শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদন্ড ও অঙ্গচ্ছেদ বিচারব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শুধুমাত্র ২০০৯ সালেই চিনে এক হাজারের বেশি (অনেকের মতে সংখ্যাটা দশ হাজার) জনের, আমেরিকাতে ৫২ জন, এমনকি বাংলাদেশেও ৩জন ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। অন্যদিকে ভারতে ১৯৯৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত এই ১৫ বছরের মধ্যে ২০০৪ সালে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় ছাড়া কারোর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় নি, যেখানে কাসভ সমেত ৫২ জন ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া সরকারি সম্মতি বা রাষ্ট্রপতির সম্মতির প্রতীক্ষায় ঝুলে রয়েছে।


সুতরাং, ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘে মৃত্যুদন্ড স্থগিত রাখার বিপক্ষে ভোট দিলেও ভারত সরকার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ব্যাপারে বিভিন্ন কারনে দ্বিধাগ্রস্ত এটা সুস্পষ্ট। বিচারব্যবস্থা যে শাস্তি ধার্য করে তার ওপর রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কতটা বাঞ্ছিত তা নিয়ে বিতর্ক আছে এবং তা প্রসঙ্গান্তরে আলোচনা করা যাবে। কিন্তু, কাসভের মৃত্যুদন্ড এমনকি উচ্চআদালত ধার্য করলেও শেষ পর্যন্ত কবে কার্যকর হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়।



এটা আশাকরি সকলেই স্বীকার করবেন ২৬/১১র মত ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলার বিচার করতে গিয়ে পৃথিবীর যে কোন দেশের আদালত সেই দেশের সর্বোচ্চ শাস্তিই দেবে। তা যাবজ্জীবন কারাদন্ডই হোক বা মৃত্যুদন্ড। কারন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে শাস্তি দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্র এটাও চাইবে তার আইনি কাঠামোর ওপর যে সাধারন নাগরিকরা ভরসা রাখেন তাঁদের সুবিচার প্রদান করে রাষ্ট্রের ওপর তাদের আস্থা এবং নিজের বৈধতা অটুট রাখতে। অর্থাৎ, দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নাগরিকদের মানবাধিকারের ওপর আঘাতকে রাষ্ট্র যে বরদাস্ত করে না সেটা সে প্রমান করবে অপরাধিকে যথোপযুক্ত শাস্তিদানের মাধ্যমে। তাই যতদিন আমাদের দেশে মৃত্যুদন্ড সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে থাকবে ততদিন কাসভের মত অপরাধীরা সেই শাস্তিই পাবেন। যদি ভবিষ্যতে কখনো আমাদের দেশে মৃত্যুদন্ডবিলোপ করা হয় তাহলেও হয়তো এই পর্যায়ের অপরাধীকে আমৃত্যু কারাগারে বন্দী জীবন যাপন করতে হবে (সেটা কতখানি মানবিক তা অবশ্য মৃত্যুদন্ড বিরোধী মানবাধিকার কর্মীরাই বলতে পারবেন), কারন যেকোন দেশের আইনে অত্যাচারীর থেকে অত্যাচারীতের, হত্যাকারীর থেকে হতর এবং তাদের সম্ভাব্য শিকারদের মানবাধিকারের গুরুত্ব অনেক বেশি।


Friday, August 13, 2010

সাঁইবাড়ি : এক রক্তাক্ত অধ্যায় - রেস্টোর ডেমোক্র্যাসি








"মুখোশগুলো খুলে নেব
বাদাম থেকে খোশার মতো
আমাদের অঙ্গীকার
ক্রোধের শালিক পোষার মতো
আমাদের অঙ্গীকার"

১৯৬৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারী বাংলা কংগ্রেসের নেতা অজয় মুখোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকা ক্ষমতায় আসার পর থেকে পশ্চিমবাংলায় সিপিএমের অত্যাচার চরমে উঠেছিল যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যোতি বসু সিপিএম পার্টির সমস্ত অনাচার অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রর মত উপেক্ষা করে ক্ষমতা ভোগ করতেন শেষে অবস্থা এতটাই চরমে উঠল যে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জী নিজেরই সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে বললেন, 'এই অসভ্য বর্বর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে থাকতে চাই না'এবং পত্রপাঠ ১৬ই মার্চ, ১৯৭০- সিপিএমের উচ্ছৃঙ্খলায় বিরক্ত হয়ে তিনি পদত্যাগ করেনযুক্তফ্রন্ট



সরকারের পতনের ফলে বাংলায় কংগ্রেস সমর্থকরা যতটা উল্লসিত হয়ে ওঠেন, আচমকা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ার আক্রোশে সিপিএম ঠিক ততটাই ফুঁসতে থাকে


বর্ধমানে সেই সময় কংগ্রেসের দূর্গ টিকিয়ে রেখেছিলেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাঁই পরিবার  সাঁইরা ছিল বর্ধমানের বড় জোতদার এবং পুরোনো কংগ্রেসি সেই সময় বর্ধমানে যখন সিপিএম প্রায় একাধিপত্য স্থাপন করে ফেলতে চাইছে তখন সাঁইবাড়ি একরকম শেষ কংগ্রেসি দূর্গ ছিল বলা যায় সাঁইরা ছিল সাত বোন পাঁচ ভাই- প্রণব, মলয়, নবকুমার, উদয় এবং বিজয় অভিযোগ, ১৯৬৯ সালের ১১ই ডিসেম্বর বর্ধমানের আলমগঞ্জে কংগ্রেসের সক্রিয় সমর্থক ইন্দ্রভূষণ গড়িয়াকে সিপিএম সমর্থকরা বোমা মেরে খুন করে সেই হত্যামামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল সাঁই পরিবার ১৬ই মার্চ গোটা



রাজ্যের মতো বর্ধমানের কংগ্রেসীরা যুক্তফ্রন্টের পতনে আনন্দিত হয়ে একটা মিছিল বার করে এবং স্বাভাবিক ভাবেই সাঁইরা তাতে অংশগ্রহন করে নেহাতই নিজেদের অভ্যন্তরীন কোঁদলে যুক্তফ্রন্টের পতনের ফলে উৎফুল্ল কংগ্রেসীদের আনন্দ দেখে ফুঁসতে থাকা সিপিএম ১৭ই মার্চ বাংলা জুড়ে বনধ্ ডাকে, একই সঙ্গে প্রতিশোধস্পৃহা গ্রাস করে তাদের


ঠিক, ১৭ই মার্চ সাঁইবাড়িতে এক নবজাত শিশু অমৃতের নামকরণ উৎসব ছিল আচমকা বনধ্ ডাকা হলেও যেহেতু অনুষ্ঠানটি আগে থেকে ঠিক করা এবং কেউ কেউ ইতিমধ্যেই চলে এসেছেন তাই অনুষ্ঠানে কাজকর্ম যথারীতি চলতে থাকে দিন সকাল ১০টা নাগাদ সিপিএমের একটা ৫০-৬০ জনের মিছিল বড় রাস্তা ছেড়ে তেলমারুই রোডে সাঁইবাড়ির সরু গলিতে এসে ঢোকে। এইরকম মিছিল আসছে দেখে মলয় প্রণব সাঁই-এর মা মৃগনয়না দেবী ভয় পেয়ে বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেন এই সময় কারা যেন বলে মিছিলে একটা ইট এসে পড়েছে এবং সেটা পড়েছে সাঁই বাড়ির দিক থেকে চারিদিকে হইচৈ বেধে যায় পরিকল্পিত ভাবে দাবানলের মত গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়, সিপিএমের মিছিলে বোমা  মেরেছে সাঁই বাড়ির লোকেরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো গুজবের আগুনে বহুরূপী 'ইট' কখনো হয়ে যায় 'বোমা' কখনো বা 'গরম ফ্যান' সেই সময় বর্ধমানের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে আদিবাসী লোকজনের ওপর সিপিএমের এতটাই প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছিল যে তারা সিপিএম নেতাদের মুখের কথা বেদবাক্যের থেকেও দামী মনে করত এখন কিছুটা কমলেও অনেক জায়গাতেই বছর দশেকে আগেও এরকম প্রভাব ছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই আগে থেকে সাঁইভাইদের সিপিএম বিরোধীতার চরম শিক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে থাকা প্রায় দেড় হাজার সিপিএম সমর্থক দিকবিদিক থেকে ছুটে এসে তীর ধনুক, টাঙ্গি,বল্লম ইত্যাদি নিয়ে সাঁই বাড়ি ঘিরে ফেলে ভেঙ্গে ফেলে আতঙ্কিত বাসিন্দাদের আত্মরক্ষার্থে বন্ধ করে রাখা বাড়ির সদর দরজা

এরপরের পৈশাচিক ঘটনাবলীর কথা অনেকেই জানেন নারকীয় ভাবে বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে খাটের তলা থেকে বার করে খুন করা হয় প্রণব সাঁইকে ওদের বাড়ির এক দিদিকে বাড়ির উঠোনে চিত করে ফেলে তাকে অবস্থায় চেপে ধরে তার ছোট ভাই  যে বয়সে নিতান্তই তরুণ মলয় সাঁইকে তার ওপর উপুর করে ফেলা হয় তারপর তার গলা হেঁসো (বড় কাস্তে) দিয়ে দু ফাঁক করে দেওয়া হয় দিদির চোখের সামনে ফিনকি দিয়ে রক্ত দিদির মুখের ওপর ছিটকে পড়ে, কিছুক্ষণ পরে নিথর হয়ে যায় ভাই এর দেহ বাড়ির গৃহশিক্ষক জীতেন্দ্রনাথ রায় জীবন বাঁচানোর তাগিদে রান্না ঘরের পাশের পাঁচিল দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ভাতের ফ্যানে পা পিছলে পড়ে যান তাঁকেও কুপিয়ে খুন করা হয় শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিনিধি বলে বাগড়ম্বর করা সিপিএমের কমরেডরা বাড়ির দুজন পরিচারকের মাথাও কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে ফেলে দুজনেই পরের দিন হাসপাতালে মারা যান এরপর ছেলেদের রক্তমাখা ভাত মৃগনয়না দেবীর মুখে গুঁজে দেয় সিপিএমের বীরপুঙ্গবরা মৃত ছেলেদের রক্ত ছিটিয়ে দেয় আতঙ্কে স্তব্ধ মায়ের গায়ে এত কিছুর পরেও আক্রোশ হয়তো মেটেনি, তাই যাওয়ার আগে নরপিশাচরা রান্না ঘরের উনুনে ছুঁড়ে দিয়ে যায় তিনমাসের নিষ্পাপ অসহায় শিশু অমৃতকে, যে পরে হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর কোনক্রমে প্রাণে বেঁচে

যায়

দিন দুপুর সাড়ে বারোটায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে দিলীপ কুমার ভট্টাচার্যের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বর্ধমান থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে  মোট ৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন (কেস নং-৫০, ১৭/০৩/১৯৭০, বর্ধমান থানা) বর্ধমানের তৎকালীন ওসি চিত্ত মুখোপাধ্যায় মামলা রুজু হয় ১৪৮/১৪৯/৩০৭/৩০২/৪৩৬/৩৮০ ধারায়। এই ঘটনার সাক্ষী খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল হয়েছিল পুলিশের পক্ষে যেহেতু ঘটনাস্থলে সকলেই সিপিএমের লোক ছিল, সাধারন মানুষ ভয়ে তল্লাট ফাঁকা করে পালিয়েছিল কিংবা ঘরে দরজা বন্ধ করে বসেছিল সমস্ত দোকানের ঝাঁপ পড়ে গিয়েছিল যারা কৌতূহল বশতঃ ঘটনা প্রত্যক্ষ করার সাহস করেছিল ভয়াবহ হিমশীতল আতঙ্ক তাদের মুখ সেলাই করে রেখেছিল তবু অনেক



কষ্টে পুলিশ ৭৮ জনকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য প্রাথমিক ভাবে রাজি করায় ১৯৭০ সালের ৬ই জুন বর্ধমান টাউন হলে 'মুখার্জী কমিশন'বসেন সাঁইবাড়ি হত্যার তদন্ত করার জন্য  সেই তদন্ত কমিশনেরসামনে সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী গুলমনী রায়কে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয় সাঁইবাড়ির সদস্যদের এবং সাক্ষীদের ওপর সাক্ষ্য না দেওয়ার এবং কেস তুলে নেওয়ার জন্য প্রচন্ড চাপ আসতে থাকে চাপের মুখে মাথা নোয়াতে না চাওয়ার শাস্তি হিসাবে ঠিক গুলমনী রায়ের মতই সাঁইবাড়ির এক ছেলে নবকুমার সাঁইকে রায়নার আহ্লাদিপুরে টাঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় এর ফলে সমস্ত সাক্ষী ভয়ানক ভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তদন্তের কাজ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। এতদসত্বেও পরবর্তীকালে মামলার তদন্ত যত এগোতে থাকে তদন্তকারীদের সামনে মূল দোষী রাঘববোয়ালদের নাম উঠে আসে। সরাসরি খুন করার জন্য অভিযুক্ত হন সিপি(আই)এম দলের পাঁচ নেতা- মেমারির তৎকালীন বিধায়ক বিনয় কোঙারখোকন সেন ওরফে নিরুপম সেন, হুগলীর চুঁচুড়ার আরও কয়েকটি কয়েকটি খুনের মামলার আসামী মানিক রায়,সিপিএম নেতা অমল হালদার এবং সেই সময় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই নেতা পল্টু ব্যানার্জী ওরফে রজত বন্দ্যোপাধ্যায়- যে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পরীক্ষার সাতটি পেপারের পরীক্ষা দিলেও ঠিক ১৭ই মার্চ, ১৯৭০ এর পর থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় অষ্টম পেপারের পরীক্ষাটি দিয়ে উঠতে পারেনি


পুরো হত্যাকান্ডে এবং ষড়যন্ত্রে এদের ভূমিকা স্পষ্ট হওয়ার পর আসানসোল ডিডিআই  ১৯৭১ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারী সিপিএমের  পঞ্চরত্ন সমেত মোট ১১১ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেন। বর্ধমান দায়রা আদালতে মামলা চলাকালীন সাক্ষীদের ক্রমাগত হুমকি, চাপ এবং উল্টোদিকে জনগণের মনে বাড়তে থাকা



অসন্তোষের কারনে মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদনের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট  ১৯৭৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আলিপুর দায়রা আদালতে মামলাটি  স্থানান্তরিত করার আদেশ দেন এবং তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারক গীতেশ ভট্টাচার্যের এজলাসে শুনানি শুরু হয়


এরপর ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গের মসনদে বসতেই শুরু হয় আসল খেলা বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চলে আদালতের পিছনের দরজা দিয়ে নৃশংস খুনের দায়ে অভিযুক্ত কমরেডদের বের করে নিয়ে আসার মরিয়া প্রয়াস সরকারের তরফে প্রধান কৌঁশুলি হিসাবে মামলা লড়ছিলেন জ্যোতির্ম্ময় রায়চৌধুরী তাঁর সহকারী কৌঁশুলি হিসাবে ছিলেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত সাক্ষীদের ভয়দেখানো নানাভাবে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি চলছিল সরকারী কৌঁশুলীদের ওপরও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল সমানে ভেবে দেখুন যে সরকার নিহত ব্যক্তিদের হয়ে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা লড়ছে সেই হত্যাকারীদের কমরেডরাই ক্ষমতায় এসে বিচার ব্যবস্থাকে পিছন থেকে ছুড়ি মেরে হত্যাকারীদের খালাস করিয়ে দিতে চাইছে! বিচারব্যবস্থার সঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের নির্লজ্জ ব্যভীচারের প্রতিবাদে ইস্তফা দেন সরকারের তরফে সহকারী কৌঁশুলী নরেন্দ্রনাথ দত্ত কিন্তু এতে শাপে বর হল বামফ্রন্টের। নরেন্দ্রবাবুর পদে সরকারী কৌঁশুলী হিসাবে নিয়োগ করা হল দক্ষিণ কলকাতার সিপিএম নেতা অসিত গঙ্গোপাধ্যায়কে

এরপর পথের ছোটোখাটো কাঁটাগুলিকে সরিয়ে হত্যাকারীদের মুক্তি ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা সরকারের তরফে সরকারি কৌঁশুলি ১৯৭৭ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর তারিখে সিপিএমের 'পঞ্চরত্ন' সমেত ৮৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন করলে বিচারপতি ৩০শে সেপ্টেম্বরের  গীতেশরঞ্জন ভট্টাচার্য চারজনের জন্য তা মঞ্জুর করলেও তা বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা তোলার আবেদন পুরোপুরি খারিজ করে রায় দেন এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে হাইকোর্টও হত্যাকরীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের সরকারি আবেদন পুনরায় খারিজ করে দেন

চাল ভেস্তে যাওয়ায় বামফ্রন্ট সরকার একই খেলা অন্য ছকে খেলার পরিকল্পনা ফাঁদে এবার টার্গেট করা হয় অভিযোগকারী এবং মূল সাক্ষীদের যে সরকারি কৌঁশুলিদের সাক্ষীদের সাহায্যে আদালতে সত্য প্রমাণের দায়িত্ব ছিল, তাঁরাই অভিযোগকারী দিলীপ ভট্টাচার্যকে এবং অন্যতম প্রধানসাক্ষী ইতিকা দত্তকে দিয়ে লিখিয়ে নেন যে তাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী নন সাঁই পরিবারের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি, হত্যার হুমকী, নবকুমার সাঁই এর হত্যা, হত্যাকান্ডের ভয়বহতায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এক ভাই উদয় সাঁই এর উন্মাদগ্রস্ত হয়ে পড়া এবং কার্যত শ্মশানে পরিণত হওয়া সাঁইবাড়িতে জীবিত দুই ভাই-এর অন্যতম বিজয় সাঁই বা তার দিদি স্বর্ণলতা দেবী এবং জামাইবাবু অমলাকান্ত যশদের সামনে সরকার এবং সাঁইবাড়িকে শ্মশানে পরিণত করে বর্ধমানকে সিপিএমের দূর্গে পরিণত করা বর্ধমানের একচ্ছত্র অধিপতি সিপিএমের ক্রমাগত দ্বিমুখী চাপ হুমকির সামনে মাথা নোয়ানো ছাড়া আর কোন রাস্তা রইল না


তাদেঁর বুকে পাথর চাপা দেওয়া দীর্ঘশ্বাস আর অশ্রুজল পান করে জীবিত থাকার অন্তহীন নরকযন্ত্রণার বিনিময়ে সিপিএমের জহ্লাদেরা মুক্তি পেল ১৯৭৮ সালের ৬ই মে বাম সরকারের আটঘাট বেঁধে (হ্যাঁ,



ততদিনে আলিপুর তৃতীয় দায়রা আদালতের বিচারপতিও বদল হয়ে গেছে!) মোকোদ্দমা প্রত্যাহারের আবেদন আর ফেরানো সম্ভব হল না বিচারপতি করের পক্ষে বাম সরকারের লাল শালুতে রক্তাক্ত হাত মুছে আদালতের খিড়কী দরজা দিয়ে বেরিয়ে সদর্পে রাজপথে উঠে এল হত্যাকারীরা, তুলে নিল রাজ্যের শাসনভার পড়ে রইল জনমানবহীন খন্ডহরে পরিণত হওয়া সাঁইবাড়ির হাহাকার আর বর্ধমানের রাস্তায় রাস্তায় উন্মাদ হয়ে যাওয়া উদয় সাঁই-এর আর্তচিৎকার