মাও - মমতা আঁতাত, - একটি চিরাচরিত বামপন্থী কুৎসা
সায়ন ঘোষ
আপনারা নিশ্চয় সকলেই বিখ্যাত নাৎসী প্রচারসচিব যোসেফ গোয়েবেলস এর নাম শুনেছেন, ব্রিটিশদের প্রচার কায়দার সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে তিনি একটি বিখ্যাত উপায় বের করেছিলেন, - “একই মিথ্যা কে বারবার করে লোকের কানে প্রবেশ করাও, লোক তো দূরের কথা ভুতের বাপেও বিশ্বাস করবে সেটা সত্যি”। অবশ্য কেবলমাত্র ব্রিটিশদের একা দোষ দিয়ে লাভ নেই, গোয়েবেলসের আগেও লেনিন নামক এক নরঘাতক ও তার সুযোগ্য সঙ্গীরা মহান (?) অক্টোবর বিপ্লবের পটভূমিকায় ও তার পরে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার মসনদে লড়াইহেতু গৃহযুদ্ধে এই কায়দা কে যথেস্ট সাফল্যের সঙ্গে ব্যাবহার করেছিলেন, তাই কেউ যদি এই একই কায়দাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে তারা হলেন কমিউনিস্টরা এবং ক্রমবিবর্তনের ফলে যে তাদের বঙ্গজ কমরেডরা সেটা আরো অনেক কিছুর মতন এটারো অন্ধ অনুকরন করার আপ্রান চেস্টা করে যাবেন এতে আর সন্দেহের অবকাশ থাকে বলে তো আমার মনে হয় না। সেই রকমই একটা ব্যার্থ প্রয়াস ‘মাও-মমতা আঁতাত’, বা বাংলার ‘জোয়ান অফ আর্কের’ নামে ‘মাওমাতা’ নামের শিরোপা প্রদান। বেশ বেশ তাতে কোন ক্ষতি নেই কারন ইতিহাস সাক্ষী আছে যারাই স্থবির সমাজব্যাবস্থায় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ক্ষমতার একছত্র আধিপত্যে বুকে কুঠারাঘাত করে বিপ্লব এনেছেন তারাই এমন উপহাস আর শিরোপাতে ভূষিত হয়েছেন, ঠিক যেমন ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে আমেরিকাতে কেউ বৃহৎ কর্পোরেশানগুলির একচেটিয়া মুনাফা লাভের পথে অন্তরায় হয়ে দাড়ালে তাকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দেওয়া হতো, আজো হেলথ কেয়ার সংক্রান্ত একটি যুগান্তকারী বিলে সই করায় আমেরিকান প্রেসিডেন্টকেও ‘কমিউনিস্ট,সোস্যালিস্ট’ অখ্যা দেওয়া হয়, ঠিক আজকে যেমন লিবিয়ায় গণতন্ত্রকামীদের তথা জনবিপ্লবের প্রতিনিধিদের নামে আল-কায়দার সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে তেমনই বিগত ৩৫ বছর ধরে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির হাতে রিক্ত,ধর্ষিত,বঞ্চিত,শোষিত,অত্যাচারিত বাংলার বুকে, বাংলার মানুষের মধ্যে গণতান্ত্রিক জণবিপ্লবের ঢেউ যিনি তুলেছেন তার নামেও যে একই কুৎসা রটানোর আরেকটি অন্ধ অপ্রয়াস হবে সেটা আর নতুন কি। তবে যে কোন ব্যাপারেই সিপিএমের বুদ্ধিটা যথেস্ট কাঁচা, এটা অবশ্য নতূন কোন তথ্য নয়, তবুও দেশের কথা ভাবার সময় হোক না হোক হনুলুলু থেকে হোক্কাইডো যারা বিপ্লবের জন্য থিসিস আওড়ান তারা এটা ভুলে গেছেন যে বাংলার মানুষ দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে যে লাল-সন্ত্রাসের সহজ শিকার হয়েছেন, সরকার ও সমাজব্যাবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে দলতন্ত্রের দাম্ভিকতা ও নিষ্ঠুর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতক্ষ্য করেছেন তাদের সামনে হাজার মিথ্যা লক্ষ বার বললেও তারা এক অচলায়তনের পতন ঘটাতে দৃঢ় প্রতিঞ্জ।
কিন্তু তবুও সেই মাও-মমতা যোগসাযোগের মত নগ্ন মিথ্যাগুলোর আসল স্বরূপ প্রকাশ করার মাধ্যমে সিপিএমের আসল চেহারাটা দেখা যাক, কারণ মুখে যারা নিজেদের গরীবদরদী, কৃষকদরদী বলে পরিচয় দিয়েছেন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের গণহত্যায় তাদের সেই মুখোশ খুলে গেছে, জঙ্গলমহলের হতদরিদ্র আদিবাসীদের উপর আর্মড ক্যাডার দিয়ে অত্যাচার করে নিরস্ত্র প্রতিরোধের যে মিথ্যা কাহিনী বলা হচ্ছিল নেতাই এর গণহত্যা রাজ্যের আম আদমির কাছে সত্য উদঘাটন করে দিয়েছে আরো এক কমিউনিস্ট ভাঁওতাবাজির। তাই মাও-মমতা গল্পটির আসল সত্য সকলের সামনে আসা দরকার বলে মনে করি।
এখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটা প্রশ্ন উঠতে পারে গত ২০০৯ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই যে মিথ্যা অপ্রচার চালানো হচ্ছিল এবং কেবলমাত্র লোকসভা নয়, বিধানসভা উপনির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচনেও মানুষ যে মিথ্যাকে বর্জন করেছে তার পরেও কেন এক নির্লজ্জ মিথ্যার বিরুদ্ধে লেখালেখি বা বিরোধিতা, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতেই হয় নইলে শত যুক্তিগ্রাহ্য কারন দেখালেও উত্তর হয়ত অসমাপ্ত রয়ে যাবে। প্রসঙ্গত লিখে যখন ফেললাম তখন একটা ছবিও পাঠকরা দেখে নিতে পারেন ২০১০ এর কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনের জন্য সিপিএম যে পোস্টার বানিয়েছিল ইন্টারনেট ঘেঁটে খুজে একটা পেলাম। আর তার প্রতিউত্তরে মানুষ কি জবাব দিয়েছেন সেটাও ছবির আকারেই তুলে দিলাম। এমন বৈপরীত্য চট করে দেখা যায় না।
![]() |
কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনে সিপিএমের পোস্টার |
![]() |
কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল |
যাইহোক যে ঘটনার কথা বলছিলাম, গত ১৩ই ফেব্রুয়ারী ব্রিগেডে সিপিএমের জনসভা ছিল, দিনটি আমার মনে রাখার একটি বিশেষ কারন ছিল, না না গল্পের গরূ গাছ ছেড়ে মগডালে ওঠার মতো ১৭ লক্ষ্য কল্পনাপ্রসূত ভিড়ের গল্পের জন্য না; মনে ছিলে ওই দিন সর্বভারতীয় স্তরে গেট (GATE – Graduate Aptitude Test for Engineers) পরীক্ষা ছিল, আরো কয়েকটি এম.বি.এর পরীক্ষাও ছিল, ওইদিন আমার মত কত ছাত্রছাত্রীর যে পরীক্ষাহল থেকে বাড়ি ফিরতে ও দ্বিতীয় অর্ধে পরীক্ষা দিতে যেতে গিয়ে বিশাল ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার গয়েছেন সে আর বলার নয়, তা সে প্রসঙ্গ থাক। সেইদিন হয়ত সকলের মনে থাকবে গ্রাম থেকে যে বিপুল জনসমস্টি কলকাতায় এসেছিলে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া, কালীঘাটের মন্দির ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানের সাথে আরেকটি স্থান ও দেখে যান সেটি হচ্ছে মমতা ব্যানার্জীর বাড়ি। তাদের কতজন যে খুব আগ্রহভরে বাড়িটি দেখে বিশ্ময় প্রকাশ করে বলেছেন যে – “ও মা, যা শুনেছিলাম তাই। এতবড় নেত্রী সত্যিই টালির বাড়িতে থাকে!না দেখলে মানাই যায় না’। - তা আর কহতব্য নয়। তাই ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম ধনী দল সিপিএম যখন জেলায় জেলায় কোটি টাকায় নির্মিত পার্টি অফিস তৈরী করে ‘সততার প্রতীক’ মমতা ব্যানার্জীর নামে টিপ্পনী কাটে এবং নিজেদের সমর্থকদের কাছে অঞ্জানতার মিথ্যা কুৎসা রটায় সেটা তবু মেনে নেওয়া যায় কিন্তু সিপিএমের সমর্থকদের ভুল ধারনাগুলো যখন আগের উল্লেখ করা ঘটনার মত ভেঙ্গে যায় তখন মনে হয় সমস্ত মিথ্যার জবাবে সত্যিটা তুলে ধরার বিশেষ প্রয়োজন আছে। তাই আশা করি এর পরেও যারা প্রশ্নের উত্তর খুজতে আরো আগ্রহী হবে তারা তাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।
ভারতবর্ষের একটি অন্যতম সম্পদ হচ্ছে তার গণতন্ত্র, তার যাবতীয় অক্ষমতা সত্তেও। ক্ষমতাসীন শাষকগোষ্ঠীর সীমাহীন লোভ, সরকারি কর্মকর্তাদের দরিদ্র আদিবাসীদের উপর অত্যাচার সিপিএমের মাসতুতো ভাই মাওবাদীদের বিচ্ছিন্নতামূলক রাজনীতিতে অক্সিজেন যোগাতে পারে তবে দরিদ্র আদিবাসীদের আবেগ ও বঞ্চনাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে ক্ষমতার মসনদে আসার জন্য তারা যে পথ বেছে নিয়েছে এককথায় তা সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদের রাস্তা, তাদের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জীর মতো জণনেত্রীর নাম জরানো মানে প্রকারন্তে মমতা ব্যানার্জীকে দেশদ্রোহী আখ্যায় ভূষিত করা, অবশ্য যারা দেশনায়ক সুভাষচন্দ্রকে “দেশদ্রোহী” ‘তোজোর কুকুর’ বলতে পারেন তারা একটু ঘুরিয়ে নাক দেখিয়ে মমতা ব্যানার্জীকেও বলবেন এতে পাঠকদের অবাক হবার কিছু নেই।
পুলিশমন্ত্রীর অপদার্থ পুলিশ একটি গণহত্যাকারীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘটানো নাশকতার ঘটনাকে আটকাতে না পেরে বাউল গানের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে নাবালক ছাত্র সহ ৩ জনকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে আর তার জেরেই গরে ওঠে পিসিপিএ বা পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারনের কমিটি। মমতা ব্যানার্জীর দোষ এটাই যে তিনি সম্পুর্ন স্বতঃফুর্ত ভাবে গড়ে ওঠা একটা আন্দোলন যার পুরোধা ছিলেন আদিবাসী রমনীরা সেটাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। ছত্রধর মাহাতো মাওবাদীদের সাহায্যকারী ছিল কিনা জানা যায় নি, তার গ্রেপ্তারের সময়ে ১ কোটি টাকার জীবনবিমার যে কথা পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মহানির্দেশক ভূপিন্দর সিং সংবাদমাধ্যম কে বলেছিলেন সেটাও আজো কোন সংবাদ পত্র দেখাতে পারে নি না পুলিশ দেখাতে পেরেছে। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া যায় যে একদা তৃণমূল থেকে বহিঃস্কৃত ছত্রধর মাহাতো মাওবাদীদের সাথে ছিলেন তাহলে একদা সিপিএম নেতা ও কর্মী লালমোহন টুডু কেন মাওবাদীদের দলে নাম লিখিয়ে ফেললেন কে জানে? একটি জনআন্দোলনকে পুলিশী বর্বরতা দিয়ে জোড় করে দমন করতে চাইলে যা হয় লালগড়েও তাই হয়েছে, মানুষ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাতা ফাদে পা দিয়েছেন আর লোকসভা নির্বাচনের আগে জঙ্গলমহলের মতো শক্তিশালী দূর্গে নিজেদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে পিসিপিএ নেতা-কর্মীদের খুন করে এই ফাদ পাততে সবথেকে বেশী যদি মাওবাদীদের সাহায্য করে থাকে তারা হল সিপিএম।
২৪ শে এপ্রিল, কলকাতায় পিসিপিএ এর সভা ও মিছিল |
এবার আসি সেই বিখ্যাত ছবির কথায় যে ছবি দেখিয়ে বারবার প্রচার করা হয় মাওবাদীদের সাথে মমতার কাল্পনিক জোগাজোগের কথার, নিচের ছবিটি তোলা হয়েছিল ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০০৯। বলা বাহুল্য ২৩ শে মার্চ ২০০৯ এ পিসিপিএ যে ভোট বয়কটের ডাক দেয় তার জন্য এর পশ্চিম মেদেনীপুরের জেলাশাষক নারায়ন নিগম ও এস.পি মনোজ ভার্মার সাথে ছত্রধর মাহাতো ও লালমোহন টুডুর বৈঠক হয় ২৫ শে মার্চ ২০০৯, এর পরে ৩০শে এপ্রিল ২০০৯ এ লালগড়ে রাজ্যের নির্বাচনী অফিসার দেবাশিষ সেনের সাথে ছত্রধর মাহাতোর সাথে বৈঠকে পিসিপিএ এর শর্তাবলী নির্বাচন কমিশন মেনে নিলে ভোট বয়কট ইয়ঠে যায়। পাঠকদের নিশ্চয় মনে আছে কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে খোদ কলকাতার বুকে পিসিপিএ একটি সভা ও মিছিল করে ২৪ শে এপ্রিল ২০০৯। লোকসভা ভোটের ফলাফল বেরোয় মে মাসে, তাহলে কি দেখা যাচ্ছে যে মমতা ব্যানার্জী ফেব্রুয়ারী মাসে একটিমাত্র সভায় উপস্থিত হয়ে মাওবাদীদের অংশীদার হয়ে গেলেন আর অন্তত ডজন খানেক সরকারি আধিকারিক, কলকাতা পুলিশের কমিশনার, মহাকরনের সেক্রেটেরিয়েটের অফিসারেরা যারা সিপিএম পরিচালিত রাজ্য সরকারের কর্তাব্যাক্তি ও নির্বাচন কমিশন,, তারা একাধিক বার পিসিপিএ এর নেতাদের সাথে বৈঠক করে, তাদের মিছিলের অনুমতি দিয়েও মাওবাদী হলেন না। বেশ মজার ব্যাপার কিন্তু যাই বলেন।
![]() |
৪ ঠা ফেব্রুয়ারী ২০০৯, পীড়াকাটায় মমতা ব্যানার্জী |
আরো মজার ব্যাপার আজকের দিন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ইউ.এ.পি.এ আইনে মাওবাদীরা নিষিদ্ধ হলেও, পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীরা বা তাদের তথাকথিত ফ্রন্টাল অর্গানাইজেশান পিসিপিএ নিষিদ্ধ নয়। এতএব ২০১০ এ মমতা ব্যানার্জীর লালগড়ের সভায় যদি পিসিপিএর সমর্থনকারীরা আসেন তাহলে ক্ষতি কি? প্রথমত পিসিপিএ কোন নিষিদ্ধ সংগঠন না, আর না তার সমর্থকেরা পিসিপিএ এর পতাকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সভায় যোগ দিয়েছিল। আর যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে "পিসিপিএ মাওবাদীদের ফ্রন্টাল অর্গানাইযেশান" তাহলেও ত সেখানে মমতা ব্যানার্জীর ভূয়সী প্রশংসা করতে হয় কারন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাতা ফাদকে উপেক্ষা করে এক বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে তিনি আবার গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন।
আরো একটি দাবী তোলা হয় কোটেশ্বার রাও ওরফে কিষেনজীর একটি দাবী নিয়ে যে তিনি মমতাকে এই রাজ্যের ভাবী প্রশাষক হিষাবে দেখতে চান, এতে যদি মাওবাদী যোগাযোগ পরিস্কার হয়ে যায় তাহলে কোন সুস্থ মানুষের বুদ্ধি নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন উঠে যায়। বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি সিপিএম নিয়েও অনেক কথা বলেছে তাদের এই কথাটা মেনে নিলে এটাও মেনে নিতে হয় যে তারা সিপিএম সম্পর্কে যা যা বলেছেন সেগুলো সত্যি। আবার এই রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সিপিএম্র প্রচারের বিরুদ্ধে গিয়ে টিএমসি ও মমতা ব্যানার্জীকে ভোট দিয়েছেন, এই রাজ্যের এত মানুষ (লোকসভা নির্বাচনের হিষাব ধরলে সংখাটা ২-২.৫ কোটির মতো) মাওবাদী প্রভাবিত আমার জানা ছিল না। অবশ্য যারা পার্লামেন্টে পরাজিত হয়ে ‘মানুষ বিষ পান করেছেন, টাকা খেয়েছেন’ বলতে পারেন তারা যে প্রকারন্তরে এই রাজ্যবাসীকে মাওবাদী আখ্যা দেবেন এ আর নতূন চমক নয়, পাঠকেরা কি বলেন? মাওবাদীরা রেলমন্ত্রীর আর ভারতের গরিব মানুষের বন্ধু হলে বিভিন্ন সময়ে গরিব মানুষের যোগাযোগের একমাত্র উপায়, দেশের লাইফ লাইন রেলের উপর না হামলা হত না মাওহানার কারনে প্রতি বছর রেলের ১৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হত। আরো একটা কথা নেতাই এর ঘটনা থেকে দিনের আলোর মতো আজ স্পস্ট কেন মমতা ব্যানার্জী বারবার জঙ্গলমহল থেকে যৌথবাহিনী সরানোর দাবী তুলেছিলেন, এই নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আগেও “নতূন সুর্য্যদ্বয়ের উপাখ্যানঃ জঙ্গলমহল” নামে বিস্তারীত লিখেছি তাই আর লিখছি না।
আরো একটি দাবী তোলা হয় কোটেশ্বার রাও ওরফে কিষেনজীর একটি দাবী নিয়ে যে তিনি মমতাকে এই রাজ্যের ভাবী প্রশাষক হিষাবে দেখতে চান, এতে যদি মাওবাদী যোগাযোগ পরিস্কার হয়ে যায় তাহলে কোন সুস্থ মানুষের বুদ্ধি নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন উঠে যায়। বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি সিপিএম নিয়েও অনেক কথা বলেছে তাদের এই কথাটা মেনে নিলে এটাও মেনে নিতে হয় যে তারা সিপিএম সম্পর্কে যা যা বলেছেন সেগুলো সত্যি। আবার এই রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সিপিএম্র প্রচারের বিরুদ্ধে গিয়ে টিএমসি ও মমতা ব্যানার্জীকে ভোট দিয়েছেন, এই রাজ্যের এত মানুষ (লোকসভা নির্বাচনের হিষাব ধরলে সংখাটা ২-২.৫ কোটির মতো) মাওবাদী প্রভাবিত আমার জানা ছিল না। অবশ্য যারা পার্লামেন্টে পরাজিত হয়ে ‘মানুষ বিষ পান করেছেন, টাকা খেয়েছেন’ বলতে পারেন তারা যে প্রকারন্তরে এই রাজ্যবাসীকে মাওবাদী আখ্যা দেবেন এ আর নতূন চমক নয়, পাঠকেরা কি বলেন? মাওবাদীরা রেলমন্ত্রীর আর ভারতের গরিব মানুষের বন্ধু হলে বিভিন্ন সময়ে গরিব মানুষের যোগাযোগের একমাত্র উপায়, দেশের লাইফ লাইন রেলের উপর না হামলা হত না মাওহানার কারনে প্রতি বছর রেলের ১৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হত। আরো একটা কথা নেতাই এর ঘটনা থেকে দিনের আলোর মতো আজ স্পস্ট কেন মমতা ব্যানার্জী বারবার জঙ্গলমহল থেকে যৌথবাহিনী সরানোর দাবী তুলেছিলেন, এই নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আগেও “নতূন সুর্য্যদ্বয়ের উপাখ্যানঃ জঙ্গলমহল” নামে বিস্তারীত লিখেছি তাই আর লিখছি না।
এর পরে আরেকটি ঘটনার কথা বলা যাক, যে সভায় মমতা মাওবাদী মুখপত্র আজাদের এনকাউন্টারে হত্যার দাবী তুলেছিলেন, এমন বলছি না মাও মুখপত্র আজাদ সাধুপুরূষ ছিলেন, কিন্তু ভারতীয় সংবিধান বিরলতম অপরাধে দোষীকেও সাম্য ও ন্যায়ের বিচার দেয়। সেদিক দিয়ে ভারতীয় সংবিধান ও আইনের মাপকাঠিতে এই দাবী অনায্য, অগণতান্ত্রিক বা অসাংবিধানিক নয়।শেষ করব একটি ঘটনার কথা বলে কদিন আগে রাজারহাটে তৃণমূল কংগ্রেসের জনসভায় নেত্রীর মোটর বাইক আরোহিত একটি ছবি সিপিএমের মুখপত্র গণশক্তি প্রকাশ করে বলে ছত্রধর মাহাতোর স্কুটারে চেপে নেত্রী যাচ্ছেন, আস্ত বাইক কে স্কুটার বলতে একমাত্র গণশক্তিই পারে, কিন্তু রাজারহাটের দলীয় নেতা তারক ভট্টাচার্য্যকে ছত্রধর মাহাতো ঠিক কি ভাবে বানানো গেল কে জানে। কলিকালে অনেক কিছুই নাকি হয়, এতো আবার ঘোর কলি। ইয়ালো জার্নালিজমের পরাকাষ্ঠা গণশক্তি (পার্টি মুখপত্র বলতে সিপিএম বাবুদের ঠিক কেমন গায়ে লাগে) আইনি নোটিশে নিঃসার্থ ভাবে ক্ষমা চায় মমতা ব্যানার্জীর কাছে, এর থেকে বড় প্রমান আর কি হতে পারে যে গল্পের গরু কে গাছে উঠিয়ে দেবার মত মাও-মমতা যোগাযোগের কুৎসা রটাতে সিপিএম কতটা অপারগ।
যাইহোক এবার একটা প্রশ্ন আছে, অনেক সিপিএম কর্মী সমর্থককে করেছি, ইউটোপিয়ান উত্তর পেয়েছি তবু কন্সট্রাকটিভ কোন উত্তর পাইনি। এই রাজ্যের সি.আই.ডি তেলেগু দীপক, কাঞ্চন, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, রাজা সরখেল সহ অনেক বড় মাপের মাওবাদী নেতাকে ধরে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করেছে তারা কেন মাও-মমতা জোগাজোগের কথা সরকার কে দিচ্ছে না? কেনই বা তারা তা মিডিয়ার সামনে আনছে না, এখনো রাজ্যের ক্ষমতার মসনদে সিপিএম তারাই বা কেন পুলিশের কাছ থেকে প্রমান নিয়ে হাইকোর্টে মমতার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার মামলা করছে না কেনই বা জনগনের সামনে সরকারি স্তরে মাওমাতার মুখোশ খুলে দিচ্ছে না? শুধু পার্টির প্রচারেই এই মিথ্যা শোনা যাচ্ছে কেন? ক্যাডার পুলিশও কি শেষে সাইড চেঞ্জ করে ফেলল নাকি কে জানে? ওই যে বললাম ঘোর কলি। আসলে কোন প্রমানই ত নেই ত দেবে কোথা থেকে।
তাই স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে এ আসলে এক সুপরিকল্পিত কুৎসা। এর জবাব মানুষ ই দেবে তবে ব্যালটে, একদলীয় পার্টিতন্ত্রে বিশ্বাসীদের ক্ষমতালোভী বর্বরদের তাদের প্রিয় ‘শুয়োরের খোয়ার’ থেকে নির্বাসনে যাবার সময় এসে গেছে তাই সিপিএম নামক পিপিলীকার পাখা গজিয়ে গেছে। ১৯৮৯ এ বার্লিনে দেওয়াল ভেঙ্গে যাবার দুবছরের মধ্যেই ১৯৯১ এ কমিউনিসমের মহীরূহের পতন ঘটেছিল। ২০০৯ এ দেওয়াল ভেঙ্গেছে এবার ২০১১।