Saturday, February 5, 2011

মিশরের গণ অভ্যুত্থান ২০১১ঃ দিনলিপি - শুভ্রঙ্কর পাল





মিশরের গণ অভ্যুত্থান  ২০১১  দিনলিপি - শুভ্রঙ্কর পাল, (মিশর থেকে)

(১)


তিউনিসিয়ার গণঅভ্যুত্থান প্রেরণা জাগাল  মিশরীয়দের, সুয়েজ এর  পথ দখল করল আম জনতা । সেটা জানুয়ারি, ২৬ তারিখের ঘটনা। তার আগে ২৫ তারিখ কায়রোতে একটা জমায়েত হয়ে গেছে বটে, সে খবর আমায় দিয়েছেন, আমার এক বান্ধবী, খুব একটা পাত্তা-দিইনি সেটাতে; ব্যস্ত ছিলাম পেশা নিয়ে। অফিসেও স্থানীয় লোকজনকে এ বিষয় আলোচনা করতে শুনিনি, কিন্তু ২৬ তারিখের ঘটনা মোড় ঘোরাল। শুরু হল পুলিশী অত্যাচার। পুলিশ এ ভরসা না রেখে, পথে নামল দাঙ্গা পুলিশ, প্যাদিয়ে লাল করল জনতাকে। প্রতিবাদ ছড়াল মিশরের অন্যত্র। উত্তরের শহর  আলেক্সেন্দ্রিয়া, পথে  নামল মানুষ, দাবী একটাই, পরিবর্তন চাই, গদি ছাড়ো মুবারক, ত্রিশ বছর ক্ষমতা দখল করে দেশবাসী কে দিয়েছ দারিদ্র, আর কিছু ব্যক্তি মাত্র জমা করেছে বিপুল সম্পদ, সবত্র আর্থিক দুর্নীতি। অতএব, ছাড়ো গদি।



২৭ তারিখও মিসরের সব বড়ো সহরেই মানুষ শামিল হল প্রতিবাদে।

জুম্মাবার, ২৮ তারিখ, জানুয়ারি ২০১১, সাপ্তাহিক প্রার্থনার পর থেকেই মানুষ রাস্তায়, স্লোগান: ‘আল্লাহ-হো-আকবর’, ‘গদি ছাড় মুবারাক’। আলেক্সেন্দ্রিয়া, সুয়েজ-ই শুধু নয়, এবার প্রতিবাদ রাজধানী খাস কায়রোতেও। সমগ্র ডাউন-টাউন ভরে গেছে প্রতিবাদী মানুষে। প্রতিবাদ রুখতে দাঙ্গা পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে, গুলি ছুড়ছে, রেয়াত করছে না কাউকে, নারী পুরুষ- শিশু কাউকে না। রাস্তায়, নেমেছে নারী, পুরুষ এমন কি শিশুও,কিশোর-কিশোরীও, বাবা মায়ের হাত ধরে তারাও নেমেছে প্রতিবাদে। অকুতোভয় মিশরের সব বড় সহরে একই ছবি। সরকারপক্ষও আগেই বুঝেছে, প্রতিবাদের ব্যাপ্তি,  তাই, ২৮ তারিখ সকাল থেকেই, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, স্তব্ধ, “সোশ্যাল মিডিয়ারকন্ঠ রোধের আয়োজন সম্পূর্ণ। আছে দাঙ্গা পুলিশও, কিন্তু প্রতিবাদী মানুষ কে রোখে কার সাধ্যি-ইতিহাস উল্টো কথা বলে যে। যখনি রাজা অত্যাচারী হয়েছে, পাত্তা দেয়নি প্রজা স্বাচ্ছন্দ্যকে,মানুষ দড়ি ধরে টান মেরেছে। সেই দড়ির টানে কটা মূর্তি ভেঙ্গেছে সেটা অন্য বিষয় কারণ টানের জোর ও স্থিতিজাড্ড্যর আলোচনায় আর এখন গেলাম না।

মানুষ ক্ষিপ্ত, দাঙ্গা পুলিশ এর উপর।দাঙ্গা পুলিশের ডাণ্ডা শুধু প্রতিবাদী মানুষের ওপরেই নয়, আক্রমণ করা হল, সাংবাদিকদেরও। আহত হলেন, সি.এন.এন, বি.বি.সি র সাংবাদিক ও তাদের সহযোগীরা। কায়রো তে প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থল তাহ্রির স্কোয়ার, এখানকার ধর্মতলা, জমজমাট বিকিকিনি অন্যান্য দিন। আজ তার চেহারা আলাদা, কাতারে কাতারে প্রতিবাদী জনতা, পিছনের পরিচিত ৬ই অক্টোবর ব্রিজ ভড়ে গেছে মানুষে, নীল নদ পেরিয়ে অগুনতি মানুষ আসছেন প্রতিবাদে সামিল হতে। পুলিশের পক্ষ থেকে ক্রমাগত বিষাক্ত কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হচ্ছে, সেসব উপেক্ষা করে, সাহসী প্রতিবাদী সামিল হচ্ছেন প্রতিবাদে। জায়গায় জায়গায় চলছে জনতা পুলিশ খণ্ড যুদ্ধ।



আগুন লাগান হল, সরকারী দলের সদর দপ্তর-এ। প্রতিবাদী জনতার উচ্ছ্বাস আর লেলিহান শিখাতে গা গরম করা শীতের সন্ধ্যে। সন্ধ্যে ৭ টা জারী হল কার্ফু, প্রথমে, কায়রোতে তারপর সমগ্র দেশে। কিন্তু রোখা গেল না মানুষকে। প্রতিবাদ চলছে রাজপথে, সন্ধ্যা শেষ রাত্রি ঘনাচ্ছে সেদিকে হুঁশ নেই কারও। মুবারাক জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন সন্ধ্যে সাড়ে সাত টায়, ঘোষণা করা হল, কিন্তু, কথা রাখলেন না তিনি। বার্তা এলো জগত বিধাতা মার্কিন মুলুক থেকে, ক্লিনটন সাহেবার বয়ানে, শ্যাম ও কুল দুই-ই রক্ষার চেষ্টা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশর শুধু আমেরিকার জোটসঙ্গী-ই নই, দুই দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা আছে, মিশরের সুয়েজ খালের। কাজেই আমেরিকার মাথা ব্যথার কারণ যথেষ্ট।

কায়রোর রাজপথে নামল সেনা, সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক। মানুষ ভয় পেলনা, তথ্য সম্প্রচার এর সরকারী দপ্তর এর অভিমুখে চলেছে তারা, সেনা বাহিনী সামনে, অকুতোভয় প্রতিবাদী জনতা । সেনা বাহিনী সংহত আচরণ দেখাল, সম্ভ্রম পেল, প্রতিবাদী জনতার।জনতা কুরনিশ করল সেনাকে। এখানে সেনা বিশেষ স্থান অধিকার করে মিশরীয় জনতার দিল-এ।
সত্য বিচিত্র এ জগত। সেনা প্রধান প্রেসিডেন্ট স্বয়ং। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ আর তার সেনানীরাই পেল, জনতার কুনিশ। সহজ সত্য, অনেক সময়-ই, ঢাকা থাকে, নানান সরল বিশ্বাসে। যুক্তিতে বিশ্বাস রাখা পাপ, অনেকের কাছে; তার থেকে সহজ, বিশ্বাস রাখা; মাথায় চাপ কম পরে।

এদিকে পুলিশের সাথে আম জনতার খণ্ড যুদ্ধ চলছেই। জনতার হাতে, ইট পাটকেল, পুলিশ ছুড়ছে, গুলি, কাঁদানে গ্যাস, জল কামান। আহত বহু, রক্তাক্ত রাজপথ, তবু চলছে, প্রতিবাদ।হতাহতের সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। মুবারাক গেলে, কে আসবেন তার কোন নিশ্চিন্তই নেই, প্রতিবাদ এর কোন নেতা নেত্রী নেই। স্বতঃস্ফূর্ত গণ-অভ্যুত্থান। নেতা নেত্রী না থাকার কারণটা সংগত, ত্রিশ বছরের, জামানায়, কার্যত বিরোধী পক্ষ বলে কিছু নেই। আণুবীক্ষণিক বিরোধী মুসলিম ভ্রাতৃকুল শেষ মূহুর্তেপ্রতিবাদ এ সামিল হয়েছে বটে, তবে আন্দোলনের রাশ তাদের হাতে নেই।  কে নেবে দায়িত্ব ভার কোনও ইঙ্গিত মিলছে না, এদিকে সরকার পক্ষ থেকেও কোন বিবৃতি জারি হয়নি।

২৮ তারিখ, রাত ১০ টা, অন্যান্য দিন, এসময় অধিকাংশ মিশর ঘুমিয়ে পরে। কায়রো আজ নিদ্রাহীন, কতৃপক্ষ-হীন। প্রতিবাদের ভাষা আছে, প্রতিবাদীদের নেতা নেই, সরকারপক্ষ ও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে, পুলিশ রাস্তা থেকে চলে গেছে, দোদুল্যমান অবস্থা। মানব বন্ধন হয়েছে বিখ্যাত মিশর সংগ্রহশালার সামনে। অভূতপূর্ব অবস্থা, প্রতিবাদী আছে, আক্রোশ নেই, কার বিরুদ্ধে জানাবে আক্রোশ, কোন সরকারী প্রতিনিধি নেই, পুলিশও হাল ছেড়েছে, সেনানীরা মিশে গেছেন জনতার ভিড়ে, জাতীয় পতাকা উড়িয়ে রাত ১১ টায়, পাশাপাশি চলেছে, আম জনতা ও সেনা বাহিনী। যাকে নিয়ে এতো কাণ্ড সেই মুবারাক কোথায়, কেউ জানে না,...



অতঃপর......
ধাক্কা তো পড়েছে, গণেশ উল্টোবে কি?

পশ্চিমবঙ্গ কি বলে? ত্রিশেরও বেশী সময়, ক্ষমতা কুক্ষিগত সেখানে।
মধ্যরাত ,তারিখ হিসেবে, ২৯ জানুয়ারি, রাস্তা, প্রতিবাদীদের দখলে, বাধা দেওয়ারও কেউ নেই, এই মাহেন্দ্র ক্ষণে এলো মুবারাক বাতা। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রেসিডেন্ট, নতুন সরকার গঠনের (মন্ত্রীসভার রদবদল আদতে) প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং ঝঞ্ঝাট বরদাস্ত করা হবে না সাফ জানালেন।মিশরের বিভিন্ন সমস্যাগুলি নিয়ে তিনি কাজ করে যাবেন, সে কথাও জানিয়ে দিলেন। মাঞ্জাটা কড়া, সন্দেহ নেই, হাতে সুতো রেখেই ছেড়েছেন, সেটাও বোঝা গেল।
তুলনা টানাটা বাড়াবাড়ি, তবুও; উল্লেখ্য বুদ্ধবাবু এতটা সাহসী হতে পারেননি, শিরে যখন সংক্রান্তি। এতয়েব, টান-পোড়েনটা রয়েই গেল, আগামী ভোর, কাকে কি বারতা পাঠাবে, কাল-ই জানা যাবে। এখনো মোবাইল চালু হয়নি, ইন্টারনেট সংযোগ ফিরে আসেনি, যোগাযোগ আজ হাতের মুঠোয় নয়। এ লেখা কবে বাঙ্গালী পাঠক পড়বেন জানি না। TV চলছে অবশ্য তাতে লেখা পড়ান চাপের। সংস্কৃতের সেই শব্দটাই, এক্ষেত্রে লাগসই, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, হ্যাঁ, তাই অবস্থা, এখন প্রতিবাদীদের। কি আশা ছিল আর কি পেলেন তারা, তিউনিসিয়া ঘটল না, কারণ, এখন আপনি মিশরে আছেন, ভুলে যাবেন না জনাব।

দেখার বিষয়, এর পর কি ঘটে......কে মাথা নত করে।
শরচন্দ্র পথের দাবীতে দ্রুত ও আমূল পরিবর্তন কে বিপ্লব আখ্যা, দিয়েছেন; এই গণ অভ্যুত্থান (Up-rise) বিপ্লব (Revolution) ঘটায় কিনা, সেটা দশক আসনে বসে দেখার ইচ্ছে রইল, সময়ের দাবীর কাছে।
রাত দেড়টা, রাস্তায় এখনও প্রতিবাদীরা, বিশেষত: তরুণ তরুণী। এ ছবি, কায়রোর, এ ছবি আলেক্সেন্দ্রিয়ার। এই ক্ষণে মার্কিন মুলুক থেকে বাতা দিলেন স্বয়ং ওবামা সাহেব, শ্যাম ও কূল রেখে, মুবারাক বাতা তে, শিলমোহর লাগালেন।
অতএব, নটে গাছ ও ছোট গল্পের গপ্পো।





(২)

২৯ তারিখ, মানুষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, প্রতিবাদ চলছেই, বরং ছড়িয়েছে, দেশের অন্যত্র, যেমন লাক্সোর, আসোয়ান, এই সব অঞ্চলে। মোবাইল ফোন চালু হয়েছে, বটে, কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ নেই এখনও। রাজপথ এখন প্রতিবাদী ও সেনাবাহিনীর দখলে। পুলিশ নেই।কিন্তু জায়গায় জায়গায় খণ্ড যুদ্ধ চলছেই। রাস্তায় পুলিশ নেই, তবু ক্ষণে ক্ষণেই, গুলির আওয়াজ পাচ্ছি, কারা গুলি চালাচ্ছে?? এখানকার নিয়ম কানুন অনুসারে, আম জনতা, বন্দুক রাখতে পারেন না।অবস্থা সঙ্গিন হচ্ছে।

এনিয়ে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না, দেশের মানুষ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তা মানতে নারাজ। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে, অনিশ্চিত হচ্ছে; বন্ধ গলির মতো লাগছে, বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী।
বিকেল ৪ টে আবার জারী হল কার্ফু। হুমকি দেওয়া হল, সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে, কার্ফু না মানলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে। প্রতিবাদী জনতা ফুঁৎকারে উড়াল, সে ধমকি। মুবারক বসে নেই, তিনি কথা রাখলেন, আগের রাতের প্রতিশ্রুতি মত, মন্ত্রীসভা বরখাস্ত করলেন। নিয়োগ করলেন, নতুন, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ওমর সুলেমান, প্রাক্তন, সেনা-গোয়েন্দা প্রধান। নতুন প্রধানমন্ত্রীও এলেন, প্রাক্তন, বায়ু-সেনা প্রধান।যা দাঁড়াল, সেনা বাহিনীকে নিজের পক্ষে নিয়ে, জনতার ওপর কায়েম হওয়ার চেষ্টা।

এদিকে, খবর এলো প্রতিবাদী জনতা, Ministry of Interior দখল করার চেষ্টা করেছে, সেখানে খণ্ড যুদ্ধে, বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কতো মানুষ হতাহত, জানা যাচ্ছেনা। যাবে কি করে, ব্যবস্থা, কার্যত ভেঙ্গে পরেছে, কেন্দ্রটা টিকে আছে মাত্র। এদিকে, মওকা বুঝে লুট-পাট শুরু হয়েছে, কারা করছে, সঠিক বোঝা যাচ্ছেনা।প্রতিবাদী মানুষ নিশ্চয় নয়।
খবর এলো, জেল ভেঙ্গে কুখ্যাত বন্দীরা পালিয়েছে।পুলিশের লেশ মাত্র কোথাও নেই। বন্দী পালান স্বাভাবিক। কারুর কারুর মতে, এসব হয়েছে ওপরতলার নির্দেশে, ঠিক যেভাবে, সাদ্দাম জামানায়, সাদ্দাম, বন্দিদের মুক্তি দিয়ে, অরাজকতা তৈরি করেছিলেন। অরাজকতা দিয়ে, বিদ্রোহ সামাল দেওয়ার কৌশল।



শোনা গেল, তরবারি হাতে, কিছু বাইক বাহিনী দেখা গেছে, কারুর কারুর হাতে বন্দুকও আছে। এরা কারা?
মহল্লায় মহল্লায় মানুষ নিজেদের পাহারাদার বাহিনী তৈরি করল, লাঠি, চেয়ার টেবিলের পায়া, ঘরোয়া চাকু, ইত্যাদি নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামল। পালা করে ঘুম, পালা করে পাহারা দেওয়ার পালা।
রাত ঘনাচ্ছে, গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে এখনও।

৩০ তারিখ, সকালবেলা, জানা গেল মুবারাক, সেনা-দপ্তরে, বৈঠক করছেন, ওমর সুলতান সঙ্গী। এদিকে বেলা বারার সঙ্গে সঙ্গে মানুষও বাড়ছে, তাহ্রির স্কোয়ারে, এটাই এখন প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থল, হবে নাইবা কেন তাহ্রির মানেই ত, liberation যদিও দেশের অন্যত্র ও চলছে প্রতিবাদ, কোথাও কোথাও হিংসাত্ত্বক, কোথাও বা শান্তিপূর্ণ
সারাদিন-ই গুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। রসদের সন্ধানে বেরিয়েছিলাম, দোকান-পাট, সব বন্ধ,দু-একটি, যাওবা খোলা আছে, তাতে লম্বা লাইন, দোকান প্রায় খালি। যে অঞ্চলে থাকি, সেটার নাম মাডী, মুলতঃ আমার মত ভিন দেশীদেরই আখরা।জিনিস পত্রের চড়া দাম নিচ্ছে, আজ, মওকা বুঝে। স্থানীয় মানুষ, লাঠি হাতে, পাহারাদারের দায়িত্ব সামলাচ্ছে।আর আমার মত বিদেশীরা খাবার সংগ্রহে ইতি উতি উকি মারছেন। এদিকে তাহ্রির স্কোয়ারে প্রতিবাদে মুখর জনতা।


কারা এই জনতা??
সমাজের সব স্তরের মানুষ-ই আছেন তাতে, কিন্তু খুব বেশী করে চোখে পরছে, মধ্যবিত্ত মানুষ, যারা, আপিস করেন, দোকান পাট চালান; যারা ঘর-সংসারের দায়িত্ব নেন, সন্তান মানুষকরেন, তারাও আছেন। আর আছে অগুনতি ছাত্র-ছাত্রী, তারা তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য লড়ছেন, সেটাই, তাদের বক্তব্য, কাড়ন এখানে, শিক্ষিত বেকার প্রচুর।দীন-দরিদ্র ও আছেন, তবে তারা সংখ্যায় কম; হয়ত তারা নিজেদের সমাজের বাহুল্ল্য মনে করেন।তাদের পক্ষে সেটা মনে করা স্বাভাবিক, শিক্ষার আলো, এখানকার সমাজে খুব বেশিদূর প্রবেশ করেনি, সচেতনতা আসেনি।দোহাই দেওয়ার জন্য কপাল তআছেই। অথ্যা, মুলতঃ মধ্যবিত্ত শ্রেণীই এই বিদ্রোহ-র চালিকাশক্তি। তারা অখুশি, গণতন্ত্র না থাকায়, তারা অখুশি স্নাতক হওয়ার পরও চাকরী না পাওয়ায়। তারা অখুশি, চাকরী পেয়েও কম মাইনে পাওয়ায়, যা তাদের, বৈভব কেনার সামর্থ্যযোগায় না, অথচ, এই দেশের-ই কিছু ব্যক্তি তা পারে।তারা বিরক্ত, সরকারে আর্থিক দুর্নীতি থাকায়। তারা বিরক্ত পুলিশী জুলুমের ওপর।তারা বিরক্ত হয়ে পরেছে, একই মুখ, দেশের প্রধান হিসেবে দেখতে দেখতে, প্রবল একঘেয়েমি, জ্বালিয়ে তুলেছে, এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে। এইসব পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বেড়িয়ে এসেছে এতো দিনে।এরা Facebook করেন, Tweeter করেন; এরা প্রতিবাদও করেন; Facebook এর আলোচনাকে রাস্তায় বাস্তব করেছেন এরা। এরা নিজেদের দেশ নিজেরা চালাতে চান, নিজেদের পছন্দের লোককে নিজেরা নেতা বেছে নিতে চান।
বিকেল ৪ টে, আকাশে, যুদ্ধ বিমান (F16), মিলিটারি হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেল।তবে কি কাচির দুই ফলা ব্যবহার করছেন মুবারক, বিদ্রোহ দমনে? একলা, পুলিশ না থাকার ফলে অরাজকতা সৃষ্টি, জেল ভাঙ্গা, অপরাধীদের দৌরাত্ম্য, মধ্যবিত্ত শ্রেণী কে ভীত করে তোলা, অপর ফলা,স্থল ও বায়ু-সেনা বাহিনীর পেশীশক্তি দেখান।প্রতিবাদী জনতা হুমকিতে ডরালেন না।তাহ্রির স্কোয়ারে জনতার সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবেনা।



আসরে এলেন, আল্বেরাদাই, ইনি নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত, আমেরিকার সাথে ভাল সমর্পকআছে, বিরোধী চরিত্র। দেশে ছিলেন না বিদ্রোহ শুরুর সময়, ফেরার পর-ই তাকে গৃহবন্দী করা হয় বলে খবরে প্রকাশ।যদিও তার বক্তব্য, পাওয়া যাচ্ছিল, কোন জাদুবলে, জানিনা।তিনি এলেন তাহ্রির স্কোয়ারে, সন্ধ্যে ৭ তা, বক্তৃতা দিলেন, মানুষ জয়ী হবে, আশা প্রকাশ করলেন, মার্কিন সরকারকে পাশে দাড়াতে বললেন। ৮ তা নাগাদ, চলে গেলেন।

এতে, একটা, সুবিধে হল, প্রতিবাদীদের পক্ষে, এক বিশিষ্ট-জনকে পাওয়া গেল অন্তত; এতক্ষণ যাবদ, প্রতিবাদীদের পক্ষে কোনও মুখ ছিলনা, ছিল, জনতা।

সুবিধে বললাম, কাড়ন ওরকম-ই, সংবাদ মাধ্যম বললও।কার সুবিধা, সেটা পরে দেখা যাবে।
এদিকে কার্ফু উপেক্ষা করে প্রতিবাদ চলছেই।
অবস্থা এখনো কাহিল।
রা
ত হল।গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে এখনও। শুনলাম, পুলিশ স্টেশন, খালি থাকার দৌলতে, বহু লোকের হাতেই অস্ত্র চলে এসেছে।অস্ত্র যদি দুপক্ষের কাছেই থাকে, যুদ্ধ বাধার কারণ তৈরি হয় বৈকি। অবশেষে, জানা গেল, রাতে,পুলিশ ফিরেছে পথে, ৪৮ ঘণ্টা পরে, ততক্ষণে অবশ্য, বহু, দোকান পাট, লুট হয়ে গেছে; বহু লোকের হাতেই অস্ত্র পৌঁছে গেছে।
অরাজকতা বহাল; একটা ফল্গু মত, ভাসছে, এর থেকে বাচাতে পারেন একমাত্র, মুবারাক।গণতন্ত্র পরে, নিরাপত্তা আগে। তাইতো, কাচির একটা ফলা কি দাগ বসান শুরু করল?
এদিকে, মার্কিন বয়ান এলো, সামরিক অভিযান করা চলবেনা; শান্তিপূর্ণউত্তরণ ঘটাতে হবে, গণতন্ত্রে; আর্থিক ও সামাজিক বদল ঘটাতে হবে।জনতারও তাই দাবী।জনতা ও মুবারক, শ্যাম ও কুল, কাকে রেখে কাকে ধরে, এক্ষেত্রে, পাল্লা ঝুঁকল, কুলে, জনতার দিকে।জনতার মুখ আল্বেরাদাই। নতুন শ্যাম?

অনেক মত বাতাসে ভাসছে, কে বা কারা নেবে দায়িত্বভার, যদি, মুবারাক গদি ছাড়েন? আল্বেরাদাই? নাকি এই সুযোগে, মুসলিম ব্রাদারহুড বা কোনও মুসলিম চরমপন্থি, ক্ষমতা দখল করে বসবে?
মাসের শেষদিন, ৩১ তারিখ, মাসিক বেতন, ব্যাংকে জমা পরল কিনা, বোঝার উপায় নেই, ইন্টারনেট নেই এখনও।এদিকে তাহ্রির স্কোয়ারে প্রতিবাদ এখনো জারী। মানুষ, সকাল সকাল বাজার থেকে, খাবার কিনে,নিয়ে, ছুটছে তাহ্রির স্কোয়ারে,  বাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ১২ তার মধ্যেই।এটাই এখন এখানকার, রোজকার জীবন।সকালে বাজার থেকে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করা, তারপর সারাদিন প্রতিবাদে সামিল হওয়া, রাত্রে, পালা করে, পাহারাদারি করা। অবশ্য, তাহ্রির স্কোয়ার, খালি হচ্ছে না কখনও, অনেকেই সেখানে রাতও কাটাচ্ছেন।পরদিন, অন্যরা এলে, তারা বিশ্রামে করতে ঘরে ফিরছেন।

আজ কার্ফু লাগু হল, বিকেল ৩ টে থেকে, প্রতিবাদীরা পাত্তা দিচ্ছেন না। ইতিমধ্যে, ১০০ লোক মারা গেছেন, খবরে প্রকাশ। এতলোকের জান কবুল প্রতিবাদ, আর, একজন ৮২ বছরের বৃদ্ধের গদি কবুল নয়।
এখনো, দড়ির খেলা।

অথবা, বৃদ্ধ ভদ্রলোক কি এমন, পাকেচক্রে পড়েছেন, যে ক্ষমতা ছাড়তে পারছেন না!!শুধু ক্ষমতা লোভ দিয়ে কি বিচার করা যায়? নাকি পুতুল নাচের ইতিকথা লিখছে অন্য কেউ। আগামীকাল থেকে, লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন, প্রতিবাদী জনতা।সেই সঙ্গে, জানিয়ে দিয়েছেন, আগামীকাল হবে, প্রেসিডেন্ট ভবন অভিযান।সেনাবাহিনী কেও ডাক দেওয়া হয়েছে, সঙ্গী হতে।জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শহীদদের কফিন থাকবে মিছিলে। চরম সংঘাতের দিন কি উপস্থিত?
এদিকে, মার্কিন সাবধানী থাকলেও, যুদ্ধ বিমানের ওড়া-উড়ি কমেনি।সন্ধ্যে ঘনাচ্ছে।কুজন শোনাচ্ছে, গুলির শব্দ।

খবর পেলাম, মিসরের সরকারি বিমান সংস্থা, তাদের সমস্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্লেন, বাতিল করেছে, সমস্ত ট্রেনও বাতিল হয়েছে। এখনো পযন্ত, মোবাইল চলছে, SMS বন্ধ, ইন্টারনেট নেই। TV  চলছে। AL-JAZEERA চ্যানেল ব্যান করা হয়েছে। ধীরে ধীরে, যোগাযোগের মাধ্যম গুলিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।আকাশে যুদ্ধ বিমান; রাজপথে, সেনা বাহিনী, ট্যাঙ্ক; থানা থেকে লুট হওয়া বন্দুক আছে অনেক মানুষের হাতে; তারা কারা, কাদের পক্ষে, সেটা এই মূহুর্তেপ্রশ্ন বটে।
তাহ্রির স্কোয়ার ঘিরে ফেলেছে, ফৌজ; ট্যাঙ্কের সংখ্যা বাড়ান হয়েছে, খবরে শুনলাম।কার্ফু জারী আছে, তবু ফৌজ, কোন বাধা দিচ্ছে না প্রতিবাদীদের, তারা যোগ দিচ্ছেন; সেনাবাহিনীর, ঘেরাটোপ পেরিয়েই তারা যাচ্ছেন, তাদের তল্লাশিও নিচ্ছেন সেনানীরা।

(৩)
আজ ১লা ফেব্রুয়ারি, প্রতিবাদীরা, মিলিওন মার্চের ডাক দিয়েছে, সেই সঙ্গে চলছে, দেশব্যাপী হরতাল, যদিও, আলাদা করে তার প্রভাব বোঝা যাচ্ছে না, কারণ গত ১ সপ্তাহ থেকেই, সমস্ত কিছু প্রায় স্তব্ধ, প্রতিবাদ ছাড়া।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানাল হল,জনতার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করা হবেনা। উসাহিত করল প্রতিবাদীদের।
প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থল, তাহ্রির স্কোয়ারে সকাল থেকেই জমায়েতের আকার বাড়ছে।
জনতা বেশীরভাগই মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যারা, ভাল পরেন, ভাল খান গোছের।তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বেসরকারি চাকুরীজীবী, মাঝারী ব্যবসায়ী। এরা কেন ক্ষিপ্ত??

একটা হিসেবে দেখলাম, কতগুলি তথ্য
১।মিসরের ৪০% মানুষ, দারিদ্রসীমার (দৈনিক আয় ২ ডলারের নিচে) নিচে, বাস করেন ।
২।GDP > ৫%
৩।শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৭%

এই হিসেব গুলিকে বিদ্রোহের কারণ হিসেবে দেখান হচ্ছে। আমি অর্থনীতি বিদ  বা সমাজতাত্ত্বিক নই; কিন্তু যুক্তি হিসেবে এগুলো খুব একটা গ্রহণযোগ্য মনে হল না। কারণ, বিদ্রোহ, যারা করছেন, তারা ওই ৪০% এর মধ্যে পড়েন না, তারা GDP র স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করেন। শিক্ষিত বেকার কিছু থাকতে পারেন, মাসিক বেতন নিয়ে অখুশিরাও আছেন নিশ্চয়, কিন্তু তারা সংখ্যাগুরু নন প্রতিবাদীদের মধ্যে। তাহলে এই ব্যাপ্তি কি ভাবে এত বিশাল হতে পারে?? হতে পারে, যদি, মানুষ, অন্যর জন্য নিজের স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করতে রাজী থাকেন, ইত্যাদি ইত্যাদি......এই সম্ভাবনাতেও যদিথেকে গেল।অবশ্য-ই, কিছু মানুষ, সেই রকম ভাবেন, কিন্তু সবাই নিশ্চয় নয়।হ্যাঁ, তিন দশকের পুলিশী অত্যাচার, একটা ইন্ধন বটে।এর থেকেও বড় একটা কারণ আছে।

অর্থনীতির জয়ঢাক বিশ্বায়নেরবাজনা এখানকার মানুষ, শুনছেন, কিন্তু খুব একটা চাক্ষুষ করার সুযোগ পাননি।মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যাদের অধিকাংশ মাঝারী ব্যবসায়ী, তারা পদে পদে পড়েছেন, পুলিশী জুলুমে, সরকারী আমলাদের দুর্নীতির খপ্পরে।গুটি কয়েক পুঁজিপতির একচ্ছত্র আধিপত্য, বেশীরভাগই, মুবারাক সমর্থিত।মাঝারি ব্যবসায়ীরাও চান, ফুলে ফেঁপে উঠতে, তাতে বাধা, মুবারাক ও তার প্রশাসন।কর্মচারীরাও চান, মোটা মাইনের চাকরী, যেমন করছে, ভারতের কিছু তরুণ প্রজন্ম; সহজ যুক্তি গুলি এরকম, এজন্য চাই, প্রতিযোগী বাজার, চাই আরও বৈদেশিক পূঁজি; মুষ্টিমেয়, দেশীয়, পুঁজিপতিদের হাতে, একচ্ছত্র ব্যবসা করার ক্ষমতা (হ্যাঁ, আইন প্রদত্ত ক্ষমতা, মুবারাক জামানায়)এসবের পরিপন্থী।  তাই পাল্টাও জামানা।এদিকে, বিশ্বব্যাপী, আর্থিক মন্দাও খুঁজছে নতুন পথ, নতুন বাজার, মিসর এখনো, পুরো উন্মুক্ত নয়; তাই সুযোগ এখানে বেশী।মিসরের দরজায়, কড়া নাড়া বিশ্বায়ন ও মিসরের ভেতর, “উন্নয়নএর সুযোগ খোজা, আখাঙ্খিত, মধ্যবিত্ত জনতা।এই দুইয়ের সাঁড়াশী চাপে, মুবারাক জামানা।
পশ্চিমবঙ্গে পাটিতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ত্রিশের ও বেশি সময় ধরে।মিসরে, পাটিতন্ত্র তৈরি হয়নি, ব্যক্তিতন্ত্র, পাটিকে ন্যাশত করেছে, তাই হয়ত, NDP র সদর দপ্তর পুড়ে গেল অত সহজে।



এদিকে তাহ্রির স্কোয়ারে, প্রতিবাদী জনতার সংখ্যা বেড়েই চলেছে, গণবিক্ষোভ চলছে, নেতা-হীন ভাবেই, যদিয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আছে তাদের মধ্যে, কিন্তু তাদের কথা মানুষ শোনে না, কারণ এরা মুড়িয়ে ছিলেন, মুবারক জামানায়।তাই প্রতিবাদী জনতা জানেন না, মুবারক গেলে বিকল্প কি? তারা শুধু চান মুবারক যেন বিদায় নেয়। তাহলেই, স্বপ্নপূরনের স্বপ্ন।

বিকল্পের অভাব, অনেক জায়গাতেই, শাসক গোষ্ঠীকে বহুদিন ধরে গদিতে বসিয়ে রাখে; যেমন, পশ্চিমবঙ্গে। বিকল্পের অভাব তৈরির কৃতিত্ব অবশ্য-ই শাসক গোষ্ঠীর প্রাপ্য।তবে সময়ের দাবী নতুন বিকল্পের সন্ধান দেয় বৈকি।
তাহ্রির স্কোয়ারে প্রতিবাদ চলছে সারাদিন ধরে, আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।
রাত সাড়ে নটা, সি এন এন সূত্রে খবর এলো, প্রেসিডেন্ট, ওবামার বিশেষ দূত, প্রেসিডেন্ট মুবারককে, পরবতী নির্বাচনে (আগামী সেপ্টেম্বরে হবে) অংশ নিতে নিষেধ করেছেন। মুবারাক সম্মত।......ঠিক-ই, তিনি আছেন, তার অঙ্গুলি-লেহনেই, গাছের পাতা নড়ে, চন্দ্র সূর্যওঠে, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
নতুন শ্যাম নিশ্চয় খুঁজে পাওয়া গেছে, এতক্ষণে; দেখার বিষয়, কে ইনি?
হায় মুবারক!

মিশরের, ভৌগলিক অবস্থান, সুয়েজ খালের উপস্থিতি, আরব বিশ্বের তেল, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক জট; সব মিলিয়ে, মিশর, আমেরিকার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই দায়িত্বগুলি, প্রেসিডেন্ট মুবারাক ভালভাবেই পালন করছিলেন; যা, আমেরিকাকে স্বস্তি দিচ্ছিল।তাই মার্কিন কৃপাও ছিল; আর্থিক সাহায্য ছিল, যার বেশিরভাগটাই (১.২ বিলিয়ন ডলার) সামরিক ক্ষেত্রে; মধ্যপ্রাচ্যের জট সামলানতে যার বিশেষ ভূমিকা আছে, নিঃসন্দেহে। নতুন বাজার খোলার দাবী, হয়ত, এই মূহুর্তেআরও বেশি জোরাল।

রাত সাড়ে দশটা, মুবারক, নিজ-মুখে, ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন আগামী ৮ মাসের মেয়াদ কালে এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন না, জানিয়ে দিলেন, আরবিতে।
ম বারক মচকালেন, ভাঙলেন। জনতার দাবী পূরণ হল না।জনতা অখুশি, স্লোগান দিচ্ছে, মুবারক, এই মূহুর্তেবিদায় হও। রাত দেড়টা, প্রতিবাদ কিছুটা স্তিমিত, কিন্তু স্তব্ধ নয়।সুদূর আমেরিকা থেকে ওবামা সাহেব বাতাদিলেন, উত্তরণ ঘটাতে হবে, এক্ষণ-ই। মানে বিদেয় হও, মুবারক। ঘাড় ধাক্কা পরলও।

কিন্তু একি, একদল মুবারাক সমর্থনকারী দল দেখা যাচ্ছে, প্রতিবাদী জনতার মধ্যে।মানে, জল আরও গড়াবে।
২রা ফেব্রুয়ারি, সকাল বেলা আপিস থেকে জানাল, আমার ফেরার সূচি ঠিক হয়ে গেছে, বিকেলের বিমানে মুম্বাই, ফিরবো।সকাল সকাল তল্পি তল্পা বেধে, বেড়িয়ে পড়লাম, নিরাপত্তার ঘেরাটোপে, পথে অগুনতি কামানের উপস্থিতি যুদ্ধক্ষেত্র চেনালও।



মেরা মহান ভারত আমায়ও অন্যান্য ভারতীয় এমন কি মাল-দ্বীপবাসীকে মুম্বাই নিয়ে এসেছে আসছে, ৪৫ হাজার নগদের বিনিময়। যেটা জেনে খারাপ লাগলো, বহু ভারতীয় শ্রমিক আটকে পরেছেন, তারা ঐ টাকা দিতে পারছেন না বলে, তাদের মালিক রাও হয়ত দায়িত্ব এরাচ্ছেন।অনেক ইউরোপীয় দেশ শুনলাম, সরকারী খরচে, দেশের লোককে দেশে ফেরাচ্ছে।

(লেখক পেশায় জিওফিজিসিস্ট {Ggeophysicist}। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানী সংস্থার কাজে মিশরে গিয়েছিলেন)


2 comments:

  1. Orkut এ PIWB Community তে লেখকের বয়ান, দেবর্ষিবাবু, আত্রেয়ীদেবী ও লেখকের কথোপকথন অনুযায়ী এই লেখাটি আগে আজকাল দৈনিকে ছাপা হয়েছে তবে কিয়দংশ সিপিএম বিরোধী হওয়ার অপরাধে বেশ কিছু অংশে কাচি চালানো হয়েছে। আজকালের যে সাংবাদিক সাক্ষাতকার নিয়েছেন তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে তিনি সাক্ষাতকারের অংশ হিষাবে লেখকের অনুমতিক্রমে লেখাটির কিছু অংশ নিয়েছেন এর বেশী কিছু না। লেখক প্রেক্ষাপটকে যে ই-মেল করেন তাতে লেখক লেখেন - "এই লেখাটির অংশবিশেষ আজকাল দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে ইতিপূর্বে,সম্পূর্নরূপে প্রকাশিত হলে পাঠক-পাঠিকাগণ সম্পূর্নতার আস্বাদ পাবেন।"। বর্তমানে PIWB Community তে সেই Thread টি খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রেক্ষাপট সেই থ্রেডটা পুনরুদ্ধারের দাবী জানায়। আজকালের সঙ্গে এই অনিচ্ছাৃত ভুল বোঝাবুঝিতে আমরা দুঃখিত। প্রতিবাদী (?) লেখকের ইচ্ছা অনুযায়ী সম্পূর্ণ লেখাটি এখানে তুলে দেওয়া হল যাতে পাঠক ও পাঠিকারা সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে অনুভব করতে পারেন। - প্রেক্ষাপট কতৃপক্ষ

    ReplyDelete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete